ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ চৈত্র ১৪৩১
ই-পেপার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসন : বিদ্যমান বাস্তবতা ও অংশীজনের প্রত্যাশা
মো. মামুন অর রশিদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০২ পিএম  (ভিজিটর : ৩৪৩)

সুপারিশ রয়েছে সুপারিশের জায়গায়। মাঝে চলে গেছে ২৭ বছর। বলছি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশের কথা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সচিব আসাফ্‌উদ্দৌলাহর নেতৃত্বাধীন ‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন’ বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেতার ও টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের জন্য সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন পেশ করে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন যত দ্রুত দেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। তাতে দেশের ভাবমূর্তিও বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল হবে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, বেতার ও টেলিভিশনের সংবাদ-প্রচার এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান নির্মাণ ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালার অভাব রয়েছে। সংবাদ-প্রচারের ক্ষেত্রে ‘নিউজ ভ্যালু’র পরিবর্তে ‘প্রটোকল ভ্যালু’ গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন’-এর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য গঠিত কমিটি কী কী কাজ করেছে, তা জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বাস্তবতা হলো ওই কমিটির কোনো কাজ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।

বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসন প্রদানের বিষয়টি বহুল আলোচিত। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারটি জোরেশোরে আলোচনায় আসে। এইচ এম এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে একমত হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের বিষয়টি এখন পর্যন্ত শুধু আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। গত বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকেরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি করেন। এরপর থেকে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসন প্রদানের বিষয়টি বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন অংশীজনের সভায়ও বিষয়টি একাধিকবার আলোচিত হয়েছে। গত বছরের ১৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালকগণের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় অভিমত দেওয়া হয়, ‘‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমন্বয়ে ‘সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা এবং সেটিতে কর্তৃপক্ষের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রয়োজন।’’ ওই মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ বেতারের একজন সাবেক মহাপরিচালক বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন যতদিন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততদিন সরকারের নির্দেশনায় অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করতে হবে।’’

গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম হিসাবে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে বহুমত কিংবা ভিন্ন মতের প্রতিফলন থাকা উচিত। একটি বড়ো প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদ ও অনুষ্ঠানে ভিন্ন মত কতটুকু প্রতিফলিত হয়? বাস্তবতা হলো, সরকার-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নজিরবিহীন। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে ভিন্ন মতের প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন পরিদর্শনকালে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম হিসাবে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের সমালোচনাকারীদেরও আমন্ত্রণ জানানো যাবে।’’ তথ্য উপদেষ্টার এই বক্তব্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অনন্য প্রচেষ্টা।  

কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের ওপর সরকারের এই উদারনীতি থাকবে কিনা, এই প্রশ্ন থেকেই যায়। গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও গণমুখী করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন প্রদানই হতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অন্যতম পদক্ষেপ। তবে, স্বায়ত্তশাসন প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিদ্যমান বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও বিবেচনা করতে হবে।

গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে। এই কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিকট সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেবে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে কমিশন নিশ্চিতভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ প্রদান করবে।

দেশবাসী আশা করে, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ যুগোপযুগী ও বাস্তবায়নযোগ্য হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন গণমানুষের গণমাধ্যমে পরিণত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা। (পিআইডি ফিচার)

লেখক: বিসিএস তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]