বাংলাদেশের শিল্পখাত যেভাবে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছিল সেই গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। মোট দেশীয় উৎপাদনে (জিডিপি) ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হয়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে এসেছে। বলা যায় শিল্প প্রবৃদ্ধি কাতে রীতিমত ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মাথাপিছু আয় ও জিডিপির চ‚ড়ান্ত হিসেবে এই তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সময় সাবেক সরকার ক্ষমতায় ছিল, ওই সময়কার বিষয়ে অন্তবর্তী সরকারের দায় নেই। তারপরও এই পরিসংখ্যানকে মাথায় রেখে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে অদূর ভবিষ্যতে শিল্পখাত আর স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে পারে।
শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি কমার প্রভাব জিডিপিতে প্রতিফলিত হয়। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ দশমিক ২৬ শতাংশে এবং ২০২২ ২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে (স্থির মূল্যে) ৩৩ লাখ ৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ছিল ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি বিনিয়োগও ভাটা দেখা দিয়েছে। ২৩-২৪ শতাংশে আটকে আছে। জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অবদান সবচে বেশি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর ছিল। কৃষি এখনো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কারণ এখন জিডিপিতে কৃষির থেকে শিল্পের অবদান বেড়ে গেলেও কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে কৃষি এগিয়ে।
আমাদের দেশটা ছোট, কিন্তু এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমান বিম্বব্যবস্থায় শিল্পে অগগতি ছাড়া আমাদের মত দেশের টিকে তাকা কঠিন। বর্তমানে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান সবচে বেশি ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এর পর শিল্প ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং কৃষির অবদান ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এক সময় প্রায় সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর দেশ এখন বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে বাংলাদেশের শিল্প পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এটা ভাল কথা।
কিন্তু এখনো আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ভারসাম্য আমদানির পক্ষে। এরকম প্রেক্ষাপটে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধিতে ভাটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা বলছে ব্যাংক ঋণের উচ্চ হারের কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়, কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ব্যবসায়ীরা সবচে কম সুদের টাকা পেয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি কমেছে। আমরা মনে করি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, এলসি খুলতে ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করা, শিল্পে গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এগুলো করা হলেই শিল্পে গতি ফিরে আসবে।