ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ চৈত্র ১৪৩১
ই-পেপার বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




পণ্য আমদানিতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা
বেড়েছে শুল্ক-কর : রোজা ঘিরে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা
এসএম শামসুজ্জোহা:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৯ এএম  (ভিজিটর : ১১০)
আসছে রোজা। এবার রোজায় পণ্যের মজুত নিয়ে শঙ্কা দূর হয়েছে অনেক আগেই। এর পরও রোজা শুরু না হওয়া পর্যন্ত দাম নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। কারণ রোজার দু-এক সপ্তাহ আগে বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেন বিক্রেতারা। 

এমনিতেই রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি। ডলার, এলসি খোলা, পণ্য খালাস প্রভৃতি নিয়ে সংকট কাটছিল না ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় রমজানে পণ্য প্রাপ্তি নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে জানুয়ারিতে এলসি খোলার হার বাড়ায় স্বস্তি দেখছে সরকার। আরও কোনো সমস্যা হলে দেখবে বলেও জানাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ঠিক আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সামনে আনছেন এখনো থেকে যাওয়া কিছু সংকটের কথা। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রাজস্ব আয়-এসব সূচক নিম্নমুখী। পাশাপাশি ডলার সংকট নিয়ে এলসি জটিলতা কাটেনি। ফলে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে শঙ্কা আর বাকিতে পণ্য আমদানি করা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। আবার মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। 

উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই হারে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই সরকার নতুন করে শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়েছে। এতে মানুষের ওপর ভ্যাটের চাপ আরও বেড়েছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে নাগরিকদের গুনতে হচ্ছে ভ্যাটের টাকা। 

এই অবস্থায় নতুন করে ফের সুদ হার বাড়ানোর চিন্তা চলছে। সঞ্চয়পত্রে সুদ হার বাড়ানো হয়েছে। আবার গত বছরের তুলনায় এবার ডলারের দাম বেশি এবং বিশ্ববাজারও চড়া। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতা ও বিশেষজ্ঞারা। দাম নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বাজারে কারসাজি ঠেকাতে প্রতিটি পর্যায়ে নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এসব বিষয় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো আমরা সেটার কোনো সুফল পাইনি। ডলারের একটা রেট সরকার ধার্য করেছে। তবে এখনো এলসিতে ক্রাইসিস রয়েছে। আমরা ম্যানেজ করছি, কিন্তু সেটার জন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে সেটা হচ্ছে জটিলতার মধ্য দিয়ে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, রমজানের পণ্যে আর কোনো সমস্যা নেই। সবাই এখন এলসি খুলতে পারছে। তারপরেও কোনো সমস্যা হলে সে বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যবসায়ীরা এখনো শঙ্কা কাটার বিষয়ে সায় দিচ্ছেন না। 

কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতির কথা বললেও তারা সেটা পর্যাপ্ত মনে করেন না। তারা বলছেন, ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলার জন্য ডলার সংকট রয়েই গেছে। 

ডলার সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকে নির্দেশ দিলেও সেটা সমাধান হয়নি। আবার বন্দরে আটকা পণ্যের জন্য এখনো তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এগুলোর প্রভাব পড়বে রমজানের পণ্যমূল্যে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে, ভ্যাট আরোপের ফলে দাম বাড়বে না। কিন্তু দাম ঠিকই বেড়েছে। প্রতি বছর রমজান ঘিরে পণ্যের দাম বাড়ে। 

এবারও সেই আশঙ্কা রয়ে গেছে। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না থাকলেও জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রয়েছে। এতে জনজীবনে প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর অনেক করপোরেট গ্রুপ বাজারে নেই। তাদের শূন্যস্থান পূরণেও কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে আমদানির ক্ষেত্রে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় রয়ে গেছে। সেগুলোর ব্যাপারেও দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখছি না।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেন, রমজানে যাতে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন মাস আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে; তাতে রমজানের পণ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে এ বছরের রমজানে পণ্যমূল্য কম থাকবে। ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মান ধরে রাখা দরকার। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আগস্টে আমদানিতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১২০ টাকা। তবে সংকটের কারণে অনানুষ্ঠানিকভাবে ১২৩-১২৪ টাকায়ও ডলার কিনতে হয়েছে আমদানিকারকদের। 

এখন আমদানিতে আনুষ্ঠানিক দর ১২৩ টাকা। এই দামে আমদানির জন্য ডলার পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিকভাবে ডলার সংকটও কমেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যে নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজমান থাকা এবং ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস করায় রমজানে এই পণ্যের স্থানীয় মূল্য হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী দেশে প্রায় ২ হাজার ১৬৮ কোটি ডলার। যা গত আগস্টের শুরুতে ছিল ২ হাজার ৪৮ কোটি ডলার। এই সময় বকেয়া বিদেশি দেনা একটি বড় অংশ (৩৫০ কোটি ডলার) পরিশোধ করা হয়েছে। এদিকে চাল আমদানির সুযোগ ও শুল্ক কমানো হলেও পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। চাল আমদানি ততটা বাড়ছে না। 

ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি চার টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক থাকলেও স্থানীয় বাজারে কারসাজির কারণে অনেক সময় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। 

তাই প্রতিটি পর্যায়ে নজরদারি দরকার। অতীতে দেখা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কারণ দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয় এবং বাজারে দাম বেড়ে যায়।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]