প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম (ভিজিটর : ২৭৪)

শ্বাসরূদ্ধকর এক ফাইনাল। ১৯৫ রানের লক্ষ্য। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান। বোলার হোসাইন তালাত। উইকেটে ছিলেন রিশাদ হোসেন আর তানভির ইসলাম। প্রথম বলেই লং অনের ওপর দিয়ে সোজা ছক্কা মেরে দিলেন রিশাদ হোসেন। পরের বলে একটি সিঙ্গেল এবং একটি ওয়াইড। চিটাগংয়ের বিপক্ষে তিন বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নিলো ফরচুন বরিশাল। টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো তামিম ইকবালের দল। বিপিএল ফাইনালের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ফাইনালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে চিটাগং কিংস। জবাবে ১৯.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল। দারুণ লড়াই করলেও ফরচুন বরিশালের সঙ্গে পারল না চিটাগং কিংস। বারবার রঙ পাল্টানো ম্যাচের শেষটায় নায়ক রিশাদ হোসেন। শেষ দুই ওভারে তার দুটি ছক্কায় স্নায়ুর কঠিন পরীক্ষায় উতরে গিয়ে বিপিএলের শিরোপা ধরে রাখল ফরচুন বরিশাল। টানা দ্বিতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ পেয়েছিল তামিম ইকবালের দল। অধিনায়কের দেখানো পথ ধরে হেঁটে সেই চ্যালেঞ্জ জিতল বরিশাল। চিটাগং কিংসের ১৯৪ রান তারা পেরিয়ে গেল তিন বল বাকি থাকতে। রোমাঞ্চকর ফাইনালে জিতল তারা ৩ উইকেটে।

বিপিএলের ফাইনালে এতো রান এর আগে তাড়া করতে পারেনি কোনো দলই। ২০২৩ সালে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতে শিরোপা ঘরে তুলেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এক আসর পরেই সেই রেকর্ড ভেঙে দিল বরিশাল। বিপিএলে ২০১৭ সালের ফাইনালে ২০৬ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স। ঢাকা ক্যাপিটালস ওই রানের ধারে কাছে যেতে পারেনি। ২০১৯ এর আসরে ১৯৯ রান করে ১৭ রানে জিতেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবার তাই জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো ফরচুন বরিশালের। তাড়া করতে হতো রেকর্ড ১৯৫ রান। ৩ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে বরিশাল ওই রান তুলে ফেলেছে। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে টানা দুবার বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে চিটাগং কিংস। ওপেনিং জুটিতে ১২.৪ ওভারে ১২১ রান তোলে তারা। ওই জুটির ওপর ভিত্তি করে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে মোহাম্মদ মিঠুনের দল। জবাবে বরিশালও ওপেনিং জুটিতে ৮.১ ওভারে ৭৬ রান যোগ করে। তামিম ও হৃদয়ের দেওয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কাইল মায়ার্স ও রিশাদ হোসেন বরিশালকে জয় এনে দিয়েছেন। চিটাগং কিংসের হয়ে ২২ বছর বয়সী পাকিস্তানি ওপেনার খাজা নাফি ৪৪ বলে ৬৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। টুর্নামেন্টের তৃতীয় ফিফটির পথে তার ব্যাট থেকে সাতটি চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কার শট আসে। বিপিএলের শুরুতে ব্যাট হাতে ভালো করতে না পেরে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের তোপে পড়া ওপেনার পারভেজ ইমন ৪৯ বলে হার না মানা ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন। তিনি ছয়টি চার ও চারটি ছক্কা হাঁকান। এছাড়া গ্রাহাম ক্লার্কের ব্যাট থেকে ২৩ বলে ৪৪ রান আসে। তিনটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন তিনি। বরিশালের হয়ে ওপেনার ও অধিনায়ক তামিম ২৯ বলে ৫৪ রান যোগ করেন। শুরু থেকে ঝড়ো ব্যাটিং করা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার নয়টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা তোলেন। টুর্নামেন্টে তামিম তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৬৭ রান করেছেন। তার ওপরে আছেন কেবল নাঈম শেখ (৫১১) ও তানজিদ তামিম (৪৮৫)। তার সঙ্গে জুটি গড়া ওপেনার হৃদয় ২৮ বলে তিন চারের শটে ৩২ রান করেন। বরিশালকে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন কাইল মায়ার্স। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়েন তিনি। ওই জুটিতে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বরিশাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার মায়ার্স ২৮ বলে ৪৬ রান করেন। তিনটি করে চার ও ছক্কা তোলেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ ১১ বলে ৭ রান করলেও ৬ বলে দুই ছক্কায় ১৮ রান করেন রিশাদ হোসেন। চিটাগংয়ের পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচায় ৪ উইকেট ঝুলিতে পোরেন এই বাঁহাতি পেসার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরিশালের মহাকাব্যিক রান তাড়ায় বিফলে যায় তার বোলিং।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চিটাগং কিংস : ১৯৪/৩ (নাফে ৬৬, পারভেজ ৭৮*, ক্লার্ক ৪৪, শামীম ২, তালাত ০*; মেয়ার্স ৪-০-৩৫-০, আলি ৪-০-২১-১, তানভির ২-০-৪০-০, ইবাদত ৪-০-৩৫-১, নাবি ৪-০-৩৪-০, রিশাদ ২-০-২৬-০)
ফরচুন বরিশাল : ১৯.৩ ওভারে ১৯৫/৭ (তামিম ৫৪, হৃদয় ৩২, মালান ১, মেয়ার্স ৪৬, মুশফিক ১৬, মাহমুদউল্লাহ ৭, নবি ৪, রিশাদ ১৮*, তানভির ০*; বিনুরা ৪-০-৪২-১, আরাফাত ২-০-১৯-০, শরিফুল ৪-০-৩৪-৪, খালেদ ৪-০-২৯-০, তালাত ৩.৩-০-৪৪-০, নাঈম ২-০-১৮-২)