প্রকাশ: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:০৬ এএম (ভিজিটর : ২০৬)

ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লব সংগঠনে যেসব ইস্যু কাজ করেছে, তার মধ্যে দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘুরেফিরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়। সরকার এ ব্যাপারে টাস্কফোর্স গঠন করে। কিন্তু টাস্কফোর্স গঠনের সাড়ে ৪ মাস পর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক টাকাও ফেরত আসেনি। তবে দেশে সন্দেহজনক প্রায় দেড় হাজার জব্দকৃত ব্যাংক একাউন্টে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের নগদ অর্থ ও শেয়ার পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অর্থ পাচাকারীদের শনাক্ত করার কাজ করছে। কিন্তু সংস্থাটির প্রধানকে পরিবর্তন করার পরও তাদের পাচারকারী শনাক্তের কাজে গতি আসেনি। এটা বলা যাচ্ছে না পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। কাজটা খুব সহজ নয়, এটা ম্যাজিকের মতো হয়ে যাবে না। তবে তা অসম্ভব নয়। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী অর্থপাচার একটা আলোচিত বিষয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এ ব্যাপারে বেশ কঠোর অবস্থানে আছে। তবে ফেরানোর প্রক্রিয়াটি খুব সহজ নয়। কিন্তু এর নজির আছে। এমনকি বাংলাদেশেও টাকা ফেরানোর নজির আছে। ধৈর্যসহকারে টাকা ফেরানোর তৎপরতা জোরদার করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে টাকা পাচার হয়েছে। প্রথম প্রথম বিগত সরকার বিষয়টি পাত্তাই দেয়নি। কিন্তু বিশ্বে টাকা পাচার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বাংলাদেশের নাম এবং কি পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে তার অঙ্ক প্রকাশ হলে ভিষয়টা মেনে নেয়া ছাড়া বিগত সরকারের উপায় ছিল না। ২০২১-২২ বাজেট আলোচনায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘কারা অর্থ পাচার করছে সে তথ্য সরকারের জানা নেই।’ পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পাচার টাকা ফেরত আনলে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ সরকার স্বীকার করে নিয়েছিল দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিষয়টা পরিষ্কার হয়েছে কীভাবে বিগত সরকারের লোকেরা দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যাংক লুটপাট করে দেশ থেকে টাকা পাচার করে নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
দেশ থেকে কত টাকা পাচার হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব বের করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে শ্বেতপত্র কমিটির হিসাবে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে বলেছেন, আগে শনাক্ত করতে হবে কোন টাকা পাচার হয়েছে, কোন দেশে গেছে, সেই দেশে মামলা করে জিততে হবে। তারপর টাকা ফেরত আসবে। সব প্রক্রিয়াই অনুসরণ করতে হবে কিন্তু টাকা ফেরত আনতেই হবে। না হলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না।