নওগাঁ সদর ইউএনও অফিসের সামনে থেকে প্রকাশ্যে হাতুরি দিয়ে বাক্স ভেঙ্গে জলমহাল ইজারার দরপত্র লুট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার চারদিন পার হলেও পুলিশ যেমন সকল আমাসীদের এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি তেমনি ভাবে উপজেলা প্রশাসনের নিবর ভ’মিকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দিনে-দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন থেকে প্রকাশ্যে বাক্স ভেঙ্গে দরপত্র লুট করার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত রোববার (২রা ফেব্রæয়ারি) আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউএনও অফিসের দ্বিতীয় তলার লোকজনকে জিম্মি করে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে বাক্স ভেঙ্গে রক্ষিত দরপত্রগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায় কতিপয় দুর্বৃত্তরা। এমন ঘটনায় শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ এমন অফিসের নিরাপত্তা নিয়ে এবং দায়িত্বরত ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন দরপত্র জমা দানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মামলার প্রেক্ষিতে গত রোববার শাহজাহান নামের একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অপরদিকে ওই দিন রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়শাল মাহমুদ পলাশ বাদি হয়ে দশজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১৫জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এমন ঘটনার পর এখন পর্যন্ত প্রশাসনের শক্তিশালী দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণে কালক্ষেপন করায় এবং কতটুকু স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরবর্তি জলমহাল ইজারা প্রদানের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার জলমহালগুলো ইজারা প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেই মোতাবেক গত ২৯ জানুয়ারি থেকে দরপত্র জমা নেওয়া হচ্ছিল। এবং গত রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ছিল জমাদানের শেষ তারিখ। কিন্তু হঠাৎ করে ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালীপুর এলাকার সাইদুল, দয়ালের মোড়ের সাজু, কোমাইগাড়ীর শাহজাহান, হাট-নওগাঁর ফারুক, কালীতলা কাঠহাটি এলাকার শ্যামল, হাট-নওগাঁর এরশাদ, মাস্টারপাড়ার হাসিবুল, দয়ালের মোড়ের নিশান, হাট-নওগাঁর আব্দুর রশিদ এবং একই এলাকার ইয়াছিন আলীসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫জন সদর উপজেলা পরিষদের ভিতরে প্রবেশ করে।
তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও হাতুড়ি নিয়ে দো-তলায় ইউএনও অফিসের সামনে গিয়ে বারান্দায় রক্ষিত দরপত্র জমাদানের কাঠের বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়শাল মাহমুদ পলাশ ও এমদাদুর রহমান জুয়েলসহ এসএম সিরাজুল ইসলাম নামের অপর একজনকে একটি রুমে আটকিয়ে রাখে।
এরপর তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে দরপত্র রাখার কাঠের বাক্সটি ভেঙে জমাকৃত জলমহালের সকল দরপত্র বস্তায় করে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই দিন রাতেই থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নূরে আলম সিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, এঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে শাহজাহান নামের এজাহার নামীয় এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাচতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আসামিদের আটকের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবনুল আবেদীন বলেন, এমন এঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামীদের আটকের চেস্টা পুলিশ অব্যাহত রেখেছে। মামলার পর আসামীদের আটক করার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। এছাড়া দরপত্রগুলোর উদ্ধার কার্যক্রম চলমান আছে। অনলাইনে সকল আবেদন সংরক্ষিত থাকার কারণে জলমহাল ইজারা প্রদানের জন্য দরপত্র জমার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।