ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৭ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড; রোমাঞ্চকর এক সত্য ঘটনা
এ. এইচ. রঞ্জু
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০১ পিএম আপডেট: ০৪.০২.২০২৫ ১২:১৩ পিএম  (ভিজিটর : ৭৬)

আমি রওনা হলাম টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডের উদ্দেশ্যে। যে গ্যাস ফিল্ডে দুবার ব্লো আউট বা অগ্নি উদ্গিরণ হয়েছিল। জলের ধর্ম যেমন নিম্নমুখী,গ্যাসের ধর্ম তেমনি ঊর্ধ্বমুখী। বস্তুর ধর্ম অনুযায়ী গ্যাস মাটির গভীরে সঞ্চিত হয়। ঊর্ধ্বমুখী চাপের কারণে গ্যাস বেরিয়ে আসে। মাটিতে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে লোহা, নিকেল, বালি প্রভৃতি। প্রচণ্ড চাপে গ্যাস বেরিয়ে আসার সময় এগুলোর সাথে সংঘর্ষ হয়।
তখনই আগুন ধরে। তাই আমরা ব্লো আউটের  সময় আগুন দেখি। সিলেট শহরে প্রবেশের আগে হাতের বাঁ দিক দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে ছাতকের দিকে। ছাতক বাজারের নিচে রয়েছে একটি লঞ্চঘাট। আরেকটি ঘাট রয়েছে ছাতক বাজারের অনিত দূরে -বাঁদিকে।
আমি সকালে বাস থেকে নামলাম ছাতক  যাওয়ার রাস্তার মোড়ে। একটি সিএনজি নিয়ে গেলাম বাঁদিকের ঘাটে। এই ঘাটটি সুরক্ষিত।  জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ঘাটটি কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর অধীন। ডানে ও বামে লোহার জালের বেষ্টনী। ঘাটটির শেষ প্রান্তে ঘেঁষে বয়ে চলেছে সুরমা নদী। প্রধান  ফটকে চেক পোস্ট।পোশাক পরিহিত একজন সেন্ট্রি পাহারারত। এখানে গাড়ি, পেট্রোল, ডিজেলসহ নানা ধরনের জিনিস রক্ষিত থাকে। ঘাটের শেষ প্রান্তে সুরমা নদীতে চলছে স্পিডবোট। নাইকোর কর্মকর্তা,কর্মচারীরা স্পিডবোটে চলাচল করে। আমি প্রধান ফটকের সেন্ট্রিকে পরিচয় দিয়ে আইডি দেখালাম। স্যালুট দিয়ে সেন্ট্রি গেট খুলে বলল,'স্যার,আপনার জন্য ইন্সপেক্টর স্যার অপেক্ষা করছেন।'
ইন্সপেক্টর একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেসিও (জুনিয়র কমিশনড অফিসার)।
ইন্সপেক্টর বললেন, 'স্যার, আপনি আগে নাস্তা করুন।' তিনি আমার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। আমি ট্যাংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডে যাচ্ছি একজন সিকিউরিটি অফিসার বা নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে। ইন্সপেক্টর আমাকে একটি আই প্রটেক্টর দিলেন। 
'এটার কি প্রয়োজন?' জানতে চাইলাম আমি।
'স্যার,স্পিডবোটে যাবার সময় আপনি বুঝতে পারবেন।' জানালো ইন্সপেক্টর। 
লঞ্চে টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। আর স্পিডবোটে যেতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। আমি চড়ে বসলাম স্পিডবোটে। তীব্র গতিতে এগিয়ে চলল স্পিডবোট। এবার বুঝলাম আই প্রটেক্টরের প্রয়োজনীয়তা। প্রচণ্ড বাতাস। আই প্রটেক্টর ছাড়া স্পিডবোটে বসে থাকা সম্ভব নয়। সুরমা নদীর দু'পাড়ে হাওর বাবিল। মাঝে মধ্যে উঁচু জায়গায় দু-একটা বাড়ি দেখা যায়। কদাচিৎ দেখা যায় গবাদি পশু। স্পিডবোট যেন উড়ে চলেছে সুরমা নদীর বুক চিরে। এ ধরনের যাত্রা সত্যিই রোমাঞ্চকর!
টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড থেকে দু-তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ঘাট। এখানে নেমে নাইকো কোম্পানির গাড়িতে টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডে যাওয়া যায়।
বর্ষাকালে নদীতে জল বেশি থাকার কারণে স্পিডবোট টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটক পর্যন্ত যেতে পারে। আমি প্রধান ফটকের কাছে গিয়ে নামলাম বোট থেকে।  আমার পরিচয় পেয়ে গেট খুলে দিল সেন্ট্রি।  দেখিয়ে দিল আমাদের অফিস কাম বেডরুম।
এখানে একজন সিকিউরিটি অফিসার ছিল।সে আমার জুনিয়র। তার কাছ থেকে আমি সব কিছু বুঝে নিলাম। জুনিয়র ডিউটি অফিসারের নাম সাইদুর রহমান। বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার আল্লাহর দরগায়। টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড চার ভাগে বিভক্ত।  গ্রিনজোন, ইয়োলো জোন, রেড জোন ও ব্লাক জোন। গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটকসহ কিছু অংশ ইটের  দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত।  কিছু অংশ টিন দিয়ে ঘেরা। আসামের চেরাপুঞ্জি অঞ্চল কাছে  হওয়ার কারণে সারা বছরই এখানে বৃষ্টিপাত হয়। আমাদের অফিস কাম বেডরুম গ্রিন জোনে। গ্যাস ফিল্ডের অধিকাংশ জায়গা প্রচুর কাদাতে ভরা। গামবুট ছাড়া চলাফেরা করা কঠিন। গ্যাস ফিল্ড এর অভ্যন্তরে রয়েছে একটি টিলা। টিলাটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাড। এছাড়াও রয়েছে আরো দুটো ছোট ছোট টিলা। টিলাগুলোর কারণে নাম হয়েছে টেংরা টিলা।
এই এলাকাটি উঁচু-নিচু টিলা, গাছপালা ও   জঙ্গলময়। এক কথায় দুর্গম। আমি যখন ছিলাম, তখন একটিমাত্র রাস্তা ছিল। 
মাঝে মাঝে পাকা এবং বাকি অংশ ইট  বিছানো। রাস্তাটি চলে গিয়েছে টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটক থেকে দু-তিন  কিলোমিটার দূরে নির্মিত ঘাট পর্যন্ত।এই রাস্তাটি তৈরি করেছে নাইকো।গ্যাস ফিল্ড এবং ঘাটের মধ্যবর্তী একটি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে বেইজ ক্যাম্প। ক্যাম্পটি তৈরি হয়েছে কন্টেনার দ্বারা। কন্টেইনারগুলো বেডরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি কন্টেইনারের ভিতরে রয়েছে এয়ার  কন্ডিশনার, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদি। এখানে একটি কন্টেইনারের ভিতরে রান্না করা হয়। পাচক কানাডিয়ান। এখানে পেট্রোল, ডিজেল, মবিল, গিয়ার অয়েল প্রভৃতি রক্ষিত  থাকে। জেনারেটরের সাহায্যে ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বেইজ ক্যাম্প পাহারারত সেন্ট্রিরা আমার অধীন।   
টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ডের অনতি দূরে ভারতীয় বর্ডার। বর্ডার পর্যন্ত সমতল। ধান চাষ হয়। সমতল ভূমির পরেই কঠিন শিলা বা পাথরের পাহাড়। পাহাড়গুলো ভারতীয় অংশে। এখানে রয়েছে সীমান্ত পিলার। টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড কে পি আই বা কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে এমবোডেড আনসার। এরা রাইফেলধারী। ৪০/ ৫০ জন আনসারের জন্য একজন প্লাটুন কমান্ডার বা পিসি। কিছু সিভিল নিরাপত্তা রক্ষীরাও রয়েছে। এরা সবাই আমার কমান্ডে।
গ্যাস ফিল্ডের বাইরে একটি পরিত্যক্ত ভবনে আছে, চাইনিজ রাইফেলধারী এপিবিএন সদস্য। সংখ্যা ১২ জন। সাব ইন্সপেক্টর মুজিব ওদের কমান্ডে। এরাও আমার অক্সিলারি ফোর্স। গ্যাস ফিল্ডের অভ্যন্তরে ইয়োলো জোনের শেষ প্রান্তে রয়েছে জেনারেটর। জেনারেটর এগুলোর ওজন অনেক। ৫-৬ টা জেনারেটর এক সঙ্গে চালু করা হলে ভূমিকম্পের মতো অবস্থা হতো। 
ভিয়েতনাম থেকে আনা হতো সাদা সিমেন্ট। ব্লো আউট হলে উপর থেকে কোন ভাবেই আগুন নেভানো যায় না। জেনারেটারের সাহায্যে হাইড্রোলিক প্রেশারে মোটা পাইপ মাটির গভীরে প্রবেশ করানো হয়। এই সিমেন্ট অনেক দামি। জমাট বাঁধে দ্রুত। প্রচণ্ড চাপে গলিত সিমেন্ট মাটির নিচের ছিদ্রপথ গুলো   বন্ধ করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় বন্ধ হয় গ্যাস উদ্গিরণ। নিভে যায় আগুন। 
মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার আসতো ট্যাংরা টিলায়।  ব্লো আউটের কারণে আগুনে পুড়ে যায় বেশ কিছু ঘর বাড়ি, দোকান পাট।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো। 
টাকা আনা হতো হেলিকপ্টারে। হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং এর সময় আমাকে জানাতো  কানাডিয়ান- ম্যাক্স। সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে আমাকে হেলিপ্যাডে উপস্থিত থাকতে হতো। কপ্টার ল্যান্ডিংয়ের পূর্বে ডান হাতের বুড়ো আঙুল উঁচু করে 'ওকে' চিহ্ন দেখাতাম।
ল্যান্ড করতো হেলিকপ্টার। কানাডিয়ান জন ব্রেঞ্চ ছিল গ্যাস ফিল্ডের ফিল্ড  ম্যানেজার।জনের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমি এবং জন মাঝে মাঝে সিলেট গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আসতাম। টাকার পরিমাণ চার থেকে পাঁচ কোটি। নিরাপত্তার জন্য আমাদের সাথে থাকতো চাইনিজ রাইফেলধারী এপিবিএন।  
টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড দুয়ারা বাজার থানার  অধীন। তবে দোয়ারাবাজার থানার ওসি ছিলেন আব্দুল আহাদ। তিনি প্রায়ই  টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনে আসতেন।ফলে তার সঙ্গে আমার গড়ে ওঠে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমার অফিসিয়াল নাম ছিল হামিদ। তাই ওসি আহাদ আমাকে হামিদভাই  বলে ডাকতেন। তার স্পিডবোট এর প্রয়োজন হলে আমাকে টেলিফোন করতেন। আমি জন সাহেবের পারমিশন নিয়ে স্পিডবোট পাঠিয়ে দিতাম। একদিন ওসি আহাদ ভাই আমাকে  টেলিফোন করলেন,'হামিদ ভাই, আপনি জন সাহেবকে নিয়ে আমার থানায় বেড়াতে  আসুন। কবে আসবেন জানান।'
'আমি জন সাহেবের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি।' ওসি আহাদের সঙ্গে কথা শেষে আমি গেলাম জন সাহেবের কাছে। তিনি পরদিন সকালে যাবেন বলে জানালেন।আমি জানিয়ে দিলাম ওসি আহাদ সাহেবকে। 
স্পিডবোট নিয়ে আমি ও জন সাহেব রওনা হলাম দোয়ারাবাজার থানার উদ্দেশ্যে।সুরমা নদীর ছাতক প্রান্তে দোয়ারাবাজার থানা। থানার ঘাটটি সান বাঁধানো।ঘাটে আমাদেরকে রিসিভ করলেন আহাদ ভাই। সুন্দর একটি ফুল ও ফলের বাগান পার হয়ে থানার মূল ভবন। এই বাগানটি করেছেন আহাদ ভাই। আহাদ ভাই আমাদের মিষ্টি, বাগানের ফলমূল, কফি পরিবেশন করলেন। কফি পান শেষে আহাদ ভাই আমাকে বললেন,থানার মসজিদটি পরিদর্শন করতে হবে।আমি জন  সাহেবকে বললাম। তিনি বললেন,' লেটস গো।'
মসজিদ পরিদর্শন শেষে আহাদ ভাই  চুপি চুপি আমাকে বললেন, মসজিদটির মেরামত কাজের জন্য পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। আমি যেন জন সাহেবের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে দেই। বিষয়টি জন সাহেবকে বলার সাথে সাথে তিনি বললেন, হামিদ, ‘আই স্যাল নট গিভ হিম ক্যাশ। ইউ টক টু দা ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল। টেল হিম প্রিপেয়ার এ এস্টিমেট এন্ড সাবমিট মি। ওকে।'এটা জেনে আহাদ ভাই একটু মন খারাপ করলেন। কিন্তু সেই সময় সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে মসজিদের মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল।  
 সারাদিন পরিশ্রম শেষে আমি একটু রিলাক্সের জন্য বেস ক্যাম্পে যেতাম। কাজ ছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে আমি যেতাম না। ক্যাম্পের সামনে রাস্তায় একটি বাঁক  আছে। এই বাঁকে পৌঁছানোর পর সেন্ট্রি চেয়ার নিয়ে আসতো। আমি বসতাম। সামনে খোলা জায়গা। ক্যাম্প থেকে আমাকে চা বিস্কুট পরিবেশন করা হতো। আমার সামনে অনেক উঁচু পাহাড়। সারিবদ্ধ পাহাড়গুলো ভারতীয় অঞ্চলে। সন্ধ্যার পর আকাশে তারার মেলা। নীরব, নিস্তব্ধ পরিবেশ।মনে হতো, পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর জীবন্ত কোনো প্রাণী নেই। পাহাড়গুলো যেন আকাশের সাথে মিশে আছে। পাহাড়ের গায়ে সন্ধ্যার পরেই দেখা যেত অসংখ্য বাতি (লাইট)। ভারতের মেঘালয় রাজ্য। পাহাড়ের ওপরে জনবসতি আছে। সবকিছু মিলিয়ে এ যেন এক রূপকথার দেশ!
এমন সুন্দর নীরব পরিবেশ এবং মায়াময় স্বপ্নিল দৃশ্য আমি জীবনে আর কোথাও দেখি নাই। টেংরা টিলার অপূর্ব এই দৃশ্য আমার মনে থাকবে চিরদিন।
একদিন রাতের বেলা।ঘুম ভাঙলো টেলিফোনে। আমি টেলিফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্তে সেন্ট্রির ভয়ার্ত কণ্ঠ,'স্যার, আগুন লেগেছে। তাড়াতাড়ি আসুন।'
'পোস্টের লোকেশন বল।' জানতে চাইলাম আমি। লোকেশন শুনে আনসারের পিসি ও এপিবিএন এর সাব ইন্সপেক্টর মুজিবকে ইনফর্ম করলাম। দ্রুত গিয়ে পৌঁছালাম ঘটনা স্থলে। ঘটনাস্থল গ্যাস ফিল্ডের বাহিরে। এলাকাটি ভীষণ নির্জন। একটি টিলার উপর। দেখলাম, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথে ৪-৫ জন লোক ঘিরে ধরল। আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আগুনের দিকে। ফেলে দেওয়া হবে আগুনের মধ্যে। বুঝলাম, আমার মৃত্যু অনিবার্য। সেন্ট্রি বাধা দিচ্ছে। আমিও প্রাণপণ যুদ্ধ করছি জীবন বাঁচানোর জন্য। এক পর্যায়ে আমি ওদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে দৌড়ে চলে যাই নিরাপদ জায়গায়। ইতিমধ্যে আনসারের পিসি এবং এপিবিএন এর সাব-ইন্সপেক্টর মুজিব রাইফেল নিয়ে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। 
আমার উপর ওদের রাগের কারণ পরে জানা গেল। এলাকার একশ্রেণীর লোক রাতের অন্ধকারে  বাঁশ ও খড় দিয়ে ঘর বানাত। নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিত। তারপর দাবি করত ক্ষতিপূরণ। আমি এর বিরোধিতা করতাম। এটাই ছিল আমার অন্যায়। 
এরপর একদিন জামাতে ইসলামির একটি দল ঢাকা থেকে এলো। এরা টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করবে। আমি ওদের এন্ট্রি দিলাম। প্রথমে ওদেরকে নিয়ে গেলাম গ্রিন জোনে। গ্রিন জোন নিরাপদ বললাম ওদের। এরপর ইয়োলো জোন। কিছুটা বিপজ্জনক। রেড জোন তার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। শেষে জামাতিদের নিয়ে গেলাম ব্ল্যাক জোনে।
ওরা জানতে চাইলো, ব্লো আউট কোথায় হয়েছিল। দূর থেকে জায়গাটা দেখালাম। ওরা পুনরায় জানতে চাইলো, কি একটা যন্ত্র নাকি মাটির নিচে চলে গেছে। আমি বললাম, যন্ত্রটার নাম রিগ। রিগ ছাড়া গ্যাস উত্তোলন করা যায়  না। শেষে বললাম, এই এলাকাটার নাম ব্ল্যাক জোন। এলাকাটি যেকোনো মুহূর্তে মাটির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। একথা শুনে জামাতিরা 'ওরে বাপরে' বলে দৌড় দিয়ে পালালো। 
এরপর টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনে এলেন অ স ম আব্দুর রব ভাই। তাকেও আমি রিসিভ করলাম। ঘুরে ঘুরে গ্যাস ফিল্ড দেখালাম। বিদায়ের বেলা। আমি রব ভাইকে প্রশ্ন করলাম, আমাকে চিন্তে পেরেছে কিনা। 
তিনি অপারগতা প্রকাশ করলেন। তারপর আমি ঢাকা গ্যানিস বিল্ডিং এর কথা বললাম। 
যে বিল্ডিং এ দেখা হতো আমাদের। এবার তিনি চিন্তে পারলেন। তখন বিএনপি ও জামাত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আমি পরিতাপের সঙ্গে বললাম,'জামাতিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কেন? আমাদেরকে ওদের হুকুম মান্য করতে হয়? এটা কি আপনার ব্যর্থতা নয়?'
'রঞ্জু, তুমি ঢাকায় এলে আমার সঙ্গে দেখা কর।' বলে একটি ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিলেন। আমি জন সাহেবের পাজেরো জিপে উঠিয়ে দিলাম রব ভাইকে। 
এবার সময় হল আমার বিদায়ের পালা। এখানে থাকাটা আমার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। বিদায়ের আগের দিন শেষ বারের মতো গেলাম বেইস ক্যাম্পে। সন্ধ্যার সেই অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করলাম মন ভরে।  
বিদায় জানালাম মেঘালয় রাজ্যের রূপবতী পাহাড়কে। পরদিন সকালে চড়ে বসলাম স্পিডবোটে। স্পিডবোট এগিয়ে চলল সামনের দিকে। পেছনে রইলো স্মৃতিময় টেংরা টিলা।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও 'হেল কমান্ডো' বইয়ের লেখক।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]