বিএনপি ছুটছে ৩১ দফা নিয়ে, প্রার্থী ঘোষণা করছে জামায়াত
ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জুনের আগে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। তবে অনেকটা আগেভাগে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে বৃহৎ দুই দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতারা ৩১ দফা নিয়ে ছুটছেন দেশের শহর বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের একাধিক অঞ্চলে সভা সমাবেশ কর্মশালা করে ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করছে দলটি। খোদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত রোববারও তিনি রাজধানীর কদমতলীতে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ৩১ দফার কর্মশালায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। কর্মশালায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মূলত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি।
তবে নির্বাচনী প্রচারে একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দেশের অন্তত পাঁচটি জেলায় সংসদ সদস্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। জেলাগুলো হলো ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ। পাঁচটি জেলায় ২৭ আসনে জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন গঠিত। এর মধ্যে আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালী এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসন। এই আসনে ঢাকা জেলা শাখার শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ইলিয়াছ মোল্লাকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা দুটি নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন। নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির সোহরাব হোসেনকে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে লড়বেন। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৩ আসন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চলের টিম সদস্য আবদুত তাওয়াবকে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী থাকবেন। ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত। ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির সরোয়ার হোসেন এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী। এছাড়া টাঙ্গাইলে ৮টি, নেত্রকোনার ৫টি এবং ময়মনসিংহের ১১টির মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। টাঙ্গাইলে আটটি আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীরা হলেনÑ টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) অধ্যক্ষ মন্তাজ আলী, টাঙ্গাইল-২ (ভূঁঞাপুর-গোপালপুর) হুমায়ূন কবীর, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) হুসনে মোবরক বাবুল, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) প্রফেসর খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-৫ (টাঙ্গাইল সদর) আহসান হাবীব মাসুদ, টাঙ্গাইল-৬ (বাসাইল-সখীপুর) শফিকুল ইসলাম খান, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ তালুকদার, টাঙ্গাইল-৮ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) ডাক্তার আব্দুল হামিদ। নেত্রকোনার ৫ আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেনÑ নেত্রকোনা-১, দুর্গাপুর-কলামাকান্দা আসনে জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও কলমাকান্দা উপজেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম, নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্টা আসনে সাবেক জেলা আমির ও ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা এনামূল হক, নেত্রকোনা-৩, আটপাড়া কেন্দুয়া আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও আটপাড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলাওয়ার হোসেন সাইফুল, নেত্রকোনা-৪, মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনে ময়মনসিংহ মহানগরী জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র-শিবিরের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, নেত্রকোনা-৫, পূর্বধলা আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও পূর্বধলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা।
এছাড়া ময়মনসিংহের ১১টির মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীর নামের তালিকা করা হয়েছে। ময়মনসিংহে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা হলেনÑ ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে মাহফুজুর রহমান, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে মাহবুব মন্ডল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মাওলানা বদরুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আসাদুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে মঞ্জুরুল হক, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ইসমাইল হোসেন ও ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে সাইফ উল্লাহ পাঠান।
জামায়াত ৫ আগস্টের পর থেকে সারাদেশে বড় বড় সমাবেশ শুরু করে। সেই সমাবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। অন্য নেতারাও ছুটছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই জামায়াতের নেতারা তৃণমূলে ছুটছেন।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)। এতে বলা হয়, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নামে নিবন্ধিত দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে আগ্রহীদের আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিদের আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে যে সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা করতে আগ্রহী সেটি উল্লেখপূর্বক দলীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় দপ্তর বরাবর জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।