ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৭ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ভয়াবহ মশার কবলে ঢাকার বাসিন্দারা
সাইদুল ইসলাম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৫৯ এএম  (ভিজিটর : ১১৯)
*দিনে এডিস ও সন্ধ্যার পরপরই ঘিরে ধরছে কিউলেক্স মশা
*দিন যতো গড়াচ্ছে বাড়ছে মশার যন্ত্রণা


ভয়াবহ মশার কবলে ঢাকার বাসিন্দারা। দিনে এডিস ও সন্ধ্যার পরপরই কিউলেক্স মশা ঘরে বাহিরে ছোট বড় সবাইকে ঘিরে ধরছে। এক সময় রাজধানীতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে মশার উপদ্রব বেশি থাকলেও এখন তা বছরজুড়ে দেখা যাচ্ছে। দিন যতো গড়াচ্ছে বাড়ছে মশার যন্ত্রণা। শত শত কোটি টাকা মশা নিধনে ব্যয় দেখানো হলেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম বরাবরের মতই চলছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এর সুফল নগরবাসী পায় না। এ বিষয়ে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করলেও তা কিছু দিন না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে মশার কামড়ে ডেঙ্গুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসীর। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহভাবে মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। এতে শান্তিতে পড়া লেখাও করতে পারছে না ছেলে মেয়েরা। সন্ধ্যা না হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরে প্রবেশ করে সারারাত চালায় অত্যাচার। ফলে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নাগরিকরা। কিন্ত এ বিষয়ে দুই সিটি কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটা নির্বিকার। তাছাড়া, কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই মশা বাড়ার জন্য দায়ী করছেন নগরবাসী। নগরীর মশার উৎপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে, কমলাপুর,মান্ডা,মুগদা পাড়া, পুরান ঢাকার কিছু এলাকা, মিরপুর, গাবতলী, মোহম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, রামপুরাসহ আরো কিছু এলাকা। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ খিলগাঁও এর বাসিন্দা আদিল জানান, মশা হঠাৎ এত বেড়ে গেছে যে রাতে নয়, এখন দিনেরবেলাও কামড়াচ্ছে। মশার অত্যাচারে পড়া লেখা কাজকর্ম কিছুই ঠিক মতো করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে খুব শিগিরই কঠোর পদক্ষেপ  নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, এডিস মশর কামড়ে ডেঙ্গু রোগে প্রতিদিন কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। মশার কামড়ে ২০২৪ সালে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ছয়শ’ মানুষ। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ছিল বেশি। এডিস মশার সংক্রমণ একটু কমলেও অনেক বেড়েছে কিউলেক্স মশা। এই মশার অত্যাচার এত বেড়েছে যে, তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
নগরবাসী বলছেন, বর্তমানে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে স্বাভাবিক থাকছে পারছে না নগরবাসী। রাজধানীর অভিজাত এলাকা বারিধারা, গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মিরপুর, পুরান ঢাকা সর্বত্রই মশার উৎপাত বেড়েছে। মশক নিধনে তেমন কোনো কাজ করছে না দুই সিটি। আগে সপ্তাহে একবার মশার ওষুধ ছিটালেও এখন এক মাসেও তাদের দেখা যায় না। ফলে দিন-রাত মশা কামড়ে অতিষ্ঠ। দিন রাত বাসায় কয়েল জ্বালানো বা মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। তবে দুই দাবি করছে, মশা নিধনে তারা প্রতিদিনই মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে। কিন্তু যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, তা নিধনে সিটি করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছরে মশা নিধনে প্রায় ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে মশা নিধনে কীটনাশক কিনতে রাখা হয় ৬৫ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহন, ব্লিচিং পাউডার ও জীবাণুনাশক এবং মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি কিনতে বরাদ্দ রাখা হয়। এ টাকা দিয়ে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ সিটির এডিস ও কিউলেক্স নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। তবে এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে গত ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালিয়েছে দক্ষিণ সিটি। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নাগরিকরা। তারা বলছেন, মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে, পাঁচ তলার ওপরও মশা আসে। বাসায় দিন-রাত মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় মৌমাছির মতো ঘিরে ধরে মশা। এখন ফুটপাথের টং দোকানে চা খেতে বসেও মশার কামড় খেতে হচ্ছে। 
জানা গেছে, নগরীতে পাঁচ শতাধিক খাল-ডোবা রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তাই এসব খাল-ডোবা মশার বংশবৃদ্ধির উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আবার রাজধানীর বেশির ভাগ বাসিন্দা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে নোংরা করে রাখে। এসব থেকেও জন্ম নেয় নতুন মশা। যে কারণে মশার উৎপাত যেন নগরবাসীর নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যালোচনায় জানা যায়, মশক নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর প্রতিটি মহল্লাভিত্তিক মশক নিধন কর্মী রয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে মশক নিধন কর্মী রয়েছে ৬৩৮ জন। উড়ন্ত মশা মারার যন্ত্র বা ফগার মেশিন রয়েছে প্রায় ৫০০টি। ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে ১০ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৫ কর্মকর্তা। পর্যাপ্ত বরাদ্দ, জনবল, সরঞ্জামাদি থাকার পরও মশক নিধনে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে দুই সিটি। তবে দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, মশা নিধনে তারা নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে মশা বেড়ে যাওয়ায় পুরোপুরি নিধন হচ্ছে না। তবে শিগগিরই মশার যন্ত্রণা কমে আসবে। 
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, মশা নিধনে আমরা নিয়মিত ক্রাশ প্রগ্রাম, লার্ভিসাইড বা কীটনাশক প্রয়োগ করছি। কিন্তু তা তেমন একটা কাজে আসছে না। কারণ এ শহরে ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, বিল, ঝিল ও খালে পানির প্রবাহ নেই। এসব স্থানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে পানির ঘনত্ব বেড়ে মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে নগরবাসীর সহযোগিতাও প্রয়োজন। দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. নিশাত পারভীন বলেন, কিউলেক্স মশা আগের থেকে এটা ঠিক। তবে মশা কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তারুণ্য উৎসবের অধীনে সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাশ প্রগ্রাম চালানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত মশার উপদ্রব কমবে।###





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]