প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২৫ পিএম (ভিজিটর : ৫৫)
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের এক সাহসী নাম মনসুর আলম মুজিবর রহমান। ৫২-র ভাষা আন্দোলনে যার ছিল সক্রিয় অংশ গ্রহণ। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যে আন্দোলনপূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয়ে ছিল তা সর্বত্র এক রকম না হলেও কোন কোন শহরে ছিল তা যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ। এরমধ্যে অন্যতম ছিল তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অন্যতম মহকুমা ঠাকুরগাঁও। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহিদ হওয়ার খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঠাকুরগাঁও এইচ.ই স্কুলের (ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) মুসলিম হোস্টেলের ২নং কক্ষে ‘ঠাকুরগাঁও মহকুমা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি’গঠন করা হয়। উক্ত বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ ফজলুল করিমকে সভাপতি এবং ১০ম শ্রেণির ছাত্র মনসুর আলম মুজিব ররহমানকে সভাপতি করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পরে ঠাকুরগাঁওয়ে পর পর সাত দিন হরতাল পালন করা হয়। আরও অনেকের সাথে সেই সময়ে মিছিল, মিটিং, পিকেটিং এ নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন মনসুর আলম। সে সময় মুসলিম হোস্টেলের ২ নম্বর কক্ষে মিছিলের জন্য পোস্টার, ব্যানার লেখা হতো। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কাগজপত্র মনসুর আলমের রুমে লুকিয়ে রাখাহত। ভাষা আন্দোলনের সময় ঠাকুরগাঁও শহরে মাইকের কোন ব্যবহার না থাকায় দেওয়ালে দেওয়ারে পোস্টারিং করে এবং টিন-পুরাতন বাসনকে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মুখে মুখে স্লোগান দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে জোরদার করা হতো। আরও অনেকের সাথে নেতৃত্বে ছিলেন মনসুর আলম। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিমলীগ সভাপতি বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার প্রখ্যাত মওলানা আব্দুল্লাহিল বাকী আল কোরাইশী ও যোগাযোগ মন্ত্রী হাসান আলী এ অঞ্চলের জনসাধারণের বিক্ষুব্ধ মনোভাব প্রশমনের উদ্দেশ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে আগমন করেন। ঠাকুরগাঁও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে কালো পতাকা ও ব্যাজধারণ করে প্রতিবাদ জানাবেন। আরও অনেকে সাথে সেখানেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল মনসুর আলম। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই ভাষা সৈনিকের।
মনসুর আলমের জন্ম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভুল্লি থানার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পারপুখিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কসিম উদ্দিন সরকার, মাতার নাম মোছাঃ নাসিমা বেগম। ৪ ভাই ২ বোনেমধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৪২ সালে তিনি কচুবাড়ি পারপুখিয়া প্রাইমারী স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৪ সালে তাকে তৎকালীন পীরগঞ্জ M.E School-এ ভর্তি করানো হয়। ১৯৪৮ সালে পীরগঞ্জ M.E School থেকে M.E (মাইনর) পাশের পর ১৯৪৮ সালে Thakurgaon M.E School-এ সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে তিনি ছিলেন উক্ত বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন প্রধান সহকারী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঠাকুরগাঁও। বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়েছেন, স্মৃতিশক্তি নেই বললেই চলে। ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষাদিবস হিসেবে বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এই স্বীকৃতির মহানায়কদের ইতিহাস কালের গহ্বরে বিলীন হওয়ার পথে। এই জীবন্ত কিংবদন্তীরা কি জীবন সারাহ্নে এসেও তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতিটা পাবেননা ?