প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:০৭ পিএম (ভিজিটর : ১৮৮)
*প্রভাবশালী চক্র এসব প্লটে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে
*জেনেও না জানান ভান করছে করছে জাতীয় গৃহায়ন
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) মিরপুর আবাসির প্রকল্প থেকে প্লট বরাদ্দ পাওয়া প্রায় চার’শ গ্রাহক গত ৩০ বছরেও কাঙ্খিত প্লট বুঝে পায়নি। এসব গ্রাহকরা বছরের পর বছর এনএইচএসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও কোন সুরাহ করতে পারেনি। প্লটগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। ফলে আদৌ প্লট বুঝে পাবে কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারছে না এসব গ্রাহক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (ডুইপ) আওতায় ১৯৯৫ সালে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে পৌনে দুই কাঠা আয়তনের ২২টি ক্যাটিগরিতে ৪২১০টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৩৯৭টি প্লট গ্রাহকদের বাস্তব দখল বুঝিয়ে না দিয়ে নামমাত্র বরাদ্দপত্র দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে এনএইচএ। পরে এসব গ্রাহকরা এ বিষয়ে এনএইচএর সাথে যোগাযোগ করলে আজ না কাল বলতে বলতে প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। এদিকে, বরাদ্দপ্রাপ্তদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে মারা গেছেন। কেউ বা মৃত্যুপথযাত্রী। এর পরও নিজের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি পরিবারের জন্য বাস্তব দখল বুঝে পেতে চান তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া গ্রাহকদের এসব প্লট অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ উঠেছে যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন যে দলের প্রভাবশালীদের দখলে থাকে এসব প্লট। তবে এর সাথে এনএইচএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত রয়েলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে অবৈদ দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্লটের মূল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিস্তিতে টাকা দিয়ে তারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। আর অবৈধ দখলে নিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে প্রভাবশালী চক্র। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মাসিক ভাড়া আদায় ও নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ বিষয়ে এনএইচএ কর্তৃপক্ষ জেনেও না জানান ভান করছে।
১১ নম্বর সেকশনের ডুইপ এলাকায় দেখা গেছে, এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল ও সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য মদতে কয়েকটি চক্র প্লটগুলো দখল করে রেখেছে। ছোট-বড় স্থাপনা তুলে তারা ভাড়া দিচ্ছে। এখান থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে তারা। তবে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন কিছু স্থাপনার ভেতর মাদকের আখড়া গড়ে তোলা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার মাদক বেচাকেনা হচ্ছে।
প্লটের বরাদ্দপ্রাপ্ত কয়েকজন মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় এসব প্লটের দখল পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা-তদবির করা হয়েছে। একাধিকার সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনইচএর পক্ষ থেকে কয়েকবার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রতিবারই অসমাপ্ত অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখে তারা চলে আসে। কয়েকবার আংশিক উচ্ছেদ হলেও পরে তা আবার অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে। তবে গত কয়েকবছরেও কোন ধরনের অভিযান চালানো হয়নি। এতে প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে এসব জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। স্থানীয় থানার পুলিশ এ অবৈধ তৎপরতার কথা জানলেও বিষয়টি সমাধানে কিছু করছে না বলেও এসব গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। গ্রাহকরা জানায়, এসব বিষয়ে এনএইচএর কাছে জানালে তাদের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে, এসব প্লট দখল পাওয়া নিয়ে আইনি লড়াই চলছে। আগে এ লাড়াই শেষ হোক তারপর আপনাদের প্লট বুঝিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু কিছুতেই কর্তৃপক্ষের এমন কথা বিশ্বাস করতে পারছে না প্লট মালিকরা। তারা এ বিষয়ে সরাসরি বর্তমার অন্তর্বর্তীকালীর সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের দাবি সরকার যদি এ বিষয়ে সরাসরি পদক্ষেপ নেয় তাহলে তাদের এসব প্লট ফিরে পাবে। এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এসব গ্রহকরা বছরের পর বছর এসে অভিযোগ করছে। কিন্তু দখলকারীরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় প্লটগুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হযনি। তিনি বলেন, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের প্রভাবশালীদের দখলে থাকে এসব প্লট। ফলে এখানে আমরা চাইলেও কিছু করতে পারছি না। তবে বর্তমান সরকার চাইলে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব।
