ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ঢাকার জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প, নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য
সাইদুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:০০ পিএম  (ভিজিটর : ৮০)

রাজধানী ঢাকাসহ এর আশপাশের জলাধার ভরাট করে একের পর এক আবাসন প্রকল্প নির্মাণ হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও ভরাটকারীদের বিরদ্ধে এতোদিন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বেশিরভাগ জলাধারগুলো ভরাট হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতিক ভারসাম্য। তবে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এরসাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার থেকে জলাধার ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে রাজউক। 

*দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে রাজউক 
*অভিযান অব্যাহত রাখার আহবান পরিকল্পনাবিদদের

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুসারে রাজধানী ছাড়াও এর বাইরে মোট ৫৯০ বর্গমাইল (অর্থাৎ ১৫৮০ বর্গকিলোমিটার) এলাকার উন্নয়ন তদারকি করছে রাজউক। আর এই ৫৯০ বর্গমাইলের মধ্যে একটি বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক জলাধার। ড্যাপে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট করা যাবে না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। কিন্ত দীর্ঘ দিন থেকে জলাধার ভরাট করে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি গড়ে উঠেছে। ফলে এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতেই অভিযান শুরু করেছে রাজউক। ফলে বুধবার (৮ জানুয়ারি) দিনব্যাপী রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটির নগর পরিকল্পনা শাখা। মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন তুরাগ নদীর পশ্চিম পাশে উত্তর কাউন্দিয়া ও বেড়িবাঁধের রাস্তায় রাজউক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। চিহ্নিত জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট বন্ধে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম। অভিযানকালে ড্যাপের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবৈধভাবে বালু ভরাট ও প্লটের নির্মাণ কাজ করায় দুই প্লট মালিক ওয়ালীদ হোসেন  ও নুরুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভেঙ্গে দেওয়া হয় ছয়টি প্লটের সীমানা প্রাচীর। ৪টি ড্রেজিং মেশিনের পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়া ওই এলাকায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধসহ ড্রেজিং মেশিন সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এ অভিযান চলবে বলে রাজউকের নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান নগর পরিবল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাটকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে রাজউক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। রাজউকের জোন ভিত্তিক এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প ঘিরে ভারাটকৃত জলাধারসহ পর্যায়ক্রমে সব জলাধার উদ্ধার করা হবে বলেও তিনি জানান।   
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত জলাধারগুলো উদ্ধার না করলে ঢাকা ও এর আশপাশে একসময় কোনো জলাধার থাকবে না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য একেবারে নষ্ট হয়ে বন্যা ও তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এছাড়া, ভূমিকম্পে হতে পারে বড় ধরনর দূর্ঘটনা। 
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ জলাধার ভরাট। একসময় ঢাকায় অসংখ্য পুকুর-জলাশয় ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে এগুলো ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় বর্ষায় তীবক্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজউকসহ সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ না করে বরং নীরব থাকায় ভরাট হতে হতে ঢাকা শহর থেকে পুকুর-জলাশয় এখন বিলুপ্তির পথে। ফলে জলাধারগুলো উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে রাজউক। এ অভিয়ান যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে সরকারকে নজর রাখারও আহবান জানিয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদরা। জানা যায়, রাজউক ইতিমধ্যে মোবাইল কোর্ট আইনের কিছু পরিবর্তন এনেছে। এর আওতায় শুধু ঢাকা মহানগরী নয়, বিভাগীয় শহর, জেলা শহরের পৌর এলাকার অন্য কিছু স্থানের খেলার মাঠ, উন্মক্ত স্থান, উদ্যানের সাথে জলাধার সংরক্ষণ আইনকে একীভূত করা হয়েছে। এদিকে, এ আইনটি সংশোধন করা হলেও রাজউক এর আগে জলাধার সংরক্ষণে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। তবে সম্প্রতি অভিযান শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন পরিবেশবীদরা। তারা মনে করেন, জলাধার সংরক্ষণ আইনের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জলাধার ভরাটকারীদের রাশ এখনই টেনে ধরতে হবে। না হলে ঢাকার চার পাশের পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে সাধারণ জনগনের। রাজউক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালিগঞ্জে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প, কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল উপশহর প্রকল্প নির্মাণ করছে। এই দু’টি উপশহর ঘিরে কিছু আবাসন কোম্পানি রাজউকের অনুমোদন না নিয়েই চার পাশের বিশাল জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। এসব অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন পরিবেশবীদরা। স্থাপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমরা রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার বলে আসছি জলাধারগুলো যাতে কেউ ভরাট না হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে অধিকাংশ জলাধার ভরাট হয়ে গেছে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, সম্প্রতি এ বিষয়ে রাজউক যে অভিযান শুরু করেছে তা যেন অব্যাহত রাখা হয়। তাহলে জলাধারগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ###







সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]