গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাত-সড়কে হকারদের স্বর্গরাজ্যে
ফুটপাতে যাতে হকাররা না বসে সেজন্য গত ১৪ বছর আগে হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন থেকে এখন আর বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনাই হচ্ছে না। ফলে স্থবির হয়ে আছে এ উদ্যোগ। এতে গুলিস্তানসহ এর আশপাশে হকাররা আগের থেকে বেশি বসছে। ভোগান্তির শেষ নেই সাধারণ মানুষের ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, স্টেডিয়াম গেট, জিপিও, পুরানা পল্টন মোড়, ফুলবাড়িয়া ও গোলাপশাহ মাজার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫০২ জন হকারের তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকায় হকারদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যবসার ধরন ও স্থান ইত্যাদি রয়েছে। এ তথ্য নিয়েই তাদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়।
এ উদ্যোগ নেয়ার সময় বলা হয়েছিল, কয়েক মাসের মধ্যেই হকারদের পরিচয়পত্র দেওয় হবে। হকারদের পরিচয়পত্র দিলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত হকারদের সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বাসন করার কথাও বলা হয়। পরে এই পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ডিএসসিসির তৎতালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গুলিস্তান পার্কে হকারদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন। কিন্তু পার্কে পুনর্বাসনের ঘোষণা দেওয়ায় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠে। তারপর হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আটকে যায়। এখন আর ডিএসসিসির কেউ হকার পুনর্বাসন নিয়ে কথা বলতে চায় না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডিএসসিসির তৎপরতা না থাকায় গুলিস্তান ও আশপাশের ফুটপাত ও সড়ক হকারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রধান সড়ক ও ফুটপাতে হকারদের সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে হকার সরিয়ে। এ কারণে গুলিস্তানে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকছে। দুই ডজন ট্রাফিক পুলিশ সেখানে দায়িত্ব পালন করলেও যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো গুলিস্তানেও হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি থেমে নেই। তবে অন্য এলাকার চাইতে গুলিস্তানেও চাঁদার পরিমাণ বেশি। গুলিস্তান-পল্টন এলাকার হকারদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ২৫০-৩৫০ টাকা করে তোলা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চাঁদার এ টাকা প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে একাধিকবার গুলিস্তান এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এমনি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় হকারদের মালামাল। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই হকাররা স্বস্থানে ফিরে আসেন। ফলে এ বিষয়ে এখন আর সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের এক নেতা বলেন, লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের কারণে ঢাকার হকার পুনর্বাসন হচ্ছে না। কারণ, হকাররা পুনর্বাসিত হলে লাইনম্যানদের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু গুলিস্তানেরই না, রাজধানীর অন্তত ২০টি স্পটের হকারদের তালিকা করে পুনর্বাসন করতে হবে। হকারদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে, তা সিটি করপোরেশনই ভালো জানে। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, হকার পুনর্বাসন না হওয়ার পেছনে গত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি দায়ী। কারণ আমরা চাইলেও তাদের কারণে হকার পুনর্বাসন করা যায়নি। পুনর্বাসন হলে তারা কেউ আর চাঁদাবাজি করতে পারতো না। ফলে তারা নানাভাবে দরবির করে হকার পুনর্বাসন বন্ধ করে রেখেছিল। বর্তমান সরকার চাইলে হকার পুনর্বাসন করা সম্ভব বলেও তিনি জানান।