উন্নত চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি ঢাকা ছেড়েছেন। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর সরাসরি তাঁকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।
লন্ডন যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হলেন তাঁর মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্যর, দলীয় নেতা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও স্টাফসহ ১৫ জনের অধিক ব্যক্তি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন। লন্ডনে ছেলের বাসায় কয়েক দিন থাকার পর বিএনপির চেয়ারপারসন লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
এদিকে বেগম জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে তিনি ‘ফিরোজা’য় পৌছেন। চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে ফিরোজা থেকে বেরিয়ে যান মির্জা ফখরুল। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি সভাপতি আমিনুল হক, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে ফিরোজা ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। বিকেল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে নেতা-কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ‘ফিরোজা’ থেকে রাত ৮টায় বেরিয়ে একটি গাড়িতে করে গুলশান ২-এর গোল চত্বর ও বনানী-কাকলী হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান খালেদা জিয়া।
এরপর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের নেত্রী সুস্থ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরবেন, এটি তাঁদের কামনা। বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন, এটি তাঁরা আশা করেন। বিএনপি যেন গণতন্ত্রের পক্ষে, দেশের মানুষের পক্ষে থাকে, তাঁদের সেই নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিকের এবারের বিদেশযাত্রা উন্নত চিকিৎসার জন্য হলেও গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন-পরবর্তী এ যাত্রা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক কৌতূহল ছিল। সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। ছেলের বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমানও খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় আছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, ব্যক্তিগত কর্মী ও দুজন গৃহকর্মী রয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।
খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ও এর দিন-তারিখ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল। একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। খালেদা জিয়াসহ সফরসঙ্গীদের কারও কারও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। শেষে ৭ জানুয়ারি চূড়ান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। মূলত সাময়িক কারামুক্তির পর থেকেই খালেদা জিয়া বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল।