ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটল এক অবাক করা কান্ড। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ব্যানার।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় এই অবাক করা ঘটনা ঘটেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। কোন আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন ছাড়াই ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে ব্যানার টাঙ্গান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। মজার বিষয় হচ্ছে নিজেদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেছেন। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করেছেন। এরই অংশ হিসেবে কলেজের প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি ব্যানার লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, এটা শুধু একটি পদক্ষেপ নয়, তিতুমীর কলেজের দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এই কলেজের ছাত্ররা দেখিয়েছিল সাহসিকতার দৃষ্টান্ত। তারা তৎকালীন ‘জিন্নাহ কলেজ’ নামটি ফেলে দিয়ে পরিবর্তন করেছিল ‘তিতুমীর কলেজ’ নামে। সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজকের এই উদ্যোগ যেন আরও একবার সেই গৌরবময় অধ্যায়ের স্মৃতি উসকে দিল। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ব্যানার টানানোর পর শিক্ষার্থীরা বলেন, তিতুমীর কলেজের বিশাল অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা এবং বিপুল শিক্ষার্থীর সংখ্যা এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য যথেষ্ট যোগ্য করে তোলে। জানা গেছে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হলেও এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ অবস্থায় পুনরায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে তিতুমীর কলেজের এমন অবাক করা কান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিখেছেন, এটা আসলে উলুবনে মুক্ত ছড়ানোর মতো, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেছেন, সাত কলেজের মধ্যে সবার পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তিতুমীর কলেজ। কথায় আছে, পরিবারের ছোট সন্তানগুলো একটু বেশিই দুষ্ট প্রকৃতির হয়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবেই সাত কলেজ পরিবারে পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট্ট হচ্ছে তিতুমীর। সেই কারণে সে একটু বেশিই দুষ্ট প্রকৃতির হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যতীত নিজ উদ্যোগে পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হতে পারে। এটি "দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০" এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনের আওতায় প্রতারণা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, বা সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সম্ভাব্য শাস্তি:
* আইন ভঙ্গের জন্য জরিমানা: সরকার অনুমোদিত নাম বা চিহ্ন ব্যবহারে ব্যর্থ হলে অর্থদণ্ড হতে পারে।
* কারাদণ্ড: গুরুতর ক্ষেত্রে কারাদণ্ড হতে পারে (বিশেষত যদি এতে জনসাধারণ বা রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়)।
* প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নিবন্ধন বাতিল: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ বা নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বা নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যৌক্তিকতা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য। এছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের মনোনীত একজন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়-২ অধিশাখার যুগ্মসচিব। এছাড়া, সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব।