প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৩:২৮ পিএম (ভিজিটর : ২৩০)
সরকারের বাড়তি খরচ মেটাতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা কর আদায় করতে হচ্ছে। এই রাজস্ব তুলতে অন্তত ৪৩ ধরনের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়নো হচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন কোনো পণ্য ও সেবাকে ব্যাটের আওতায় না এনে বিদ্যমান ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ সময়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ফলে সাধারণ ভোক্তার ওপর নতুন করে ব্যয়ের চাপ তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে যেসব পণ্য ও সেবায় মূল্যসংযোজন করের হার কম সেগুলোতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ আরোপের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এরমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের পরিকল্পনার আওতায় এসেছে এমনসব খাত- যেখান থেকে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালুও বাড়ানো হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যে নেয়া এ পরিকল্পনার কারন সম্পর্কে দুটি সংশ্লিষ্ট কেউ মুখ খুলছেন না। তবে ভোগ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে এর আগে কিছু আমাদানি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস করায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তার ওপর আচমকা সরকারের বেতন ভাতাজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণেও এই রাজস্বব্যয় বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজেট ঘাটতির টাকা জোগান দিতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ না বাড়িয়ে কর রাজস্ব আদায়ের পথ অনুসরণের তাগিদ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পোশাকের ওপর ভ্যাটের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। বর্তমানে সাধারণ মানের এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) রেস্তোরাঁয় খাওয়ার জন্য ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া, নন-এসি হোটেলের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর স্থানীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর বর্তমানে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটিও দ্বিগুণ হতে পারে। শুধু ব্র্যান্ডেড নয়, সাধারণ মানের যেকোনো পোশাক কিনলেই ক্রেতাদের এ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতে পারে। মেডিসিন ব্যবসায়ও ভ্যাট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট কার্যকর আছে, সেটি ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, সুপারি ও আরও ৭টি পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসতে পারে এনবিআর-এর কাছ থেকে। এর বাইরে বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে এক্সাইজ ডিউটি এবং তামাক পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যালু বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে রাজস্ব বোর্ডের।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন লক্ষ্য পূরণে বছরের মাঝামাঝি এসে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে আগামী শনিবার অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা। আগামী অর্থবছর থেকেই প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপর একক ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০১২ সালে আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে পাশ করা একটি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেও তা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এনবিআর-এর ভ্যাট নীতির একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাস থেকেই আমরা ১৫ শতাংশ ইউনিফায়েড রেটের পরিকল্পনা করছি।