প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:১৭ পিএম (ভিজিটর : ২০৩)
আগামীকাল শনিবার ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আর এ দিবটিতে শ্রদ্ধা নিবদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর মিরপুর ও রায়েরবাগে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। যদিও এই দুই স্মৃতিসৌধ সারা বছরই থাকে অরক্ষিত-অবহেলিত। এটি রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোন বরাদ্দ বা উদ্যোগ। ফলে সব সময় থাকে নোংরা। তবে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে এটিকে ঘষামাজা করে নানাভাবে সাজায় গণপূর্ত বিভাগ এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এবারও তাই করা হয়েছে। দিবসটি যথাযথভাবে পালনে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর আল বদর বাহিনীর হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এটি নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২শে ডিসেম্বর এই সৌধের ফলক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। স্থপতি : মোস্তফা আলী কুদ্দুস। এটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। দক্ষিণ পাশের অংশটি প্রখ্যাতজনদের জন্য সংরক্ষিত কবরস্থান। উত্তরের বড় অংশটি সাধারণের জন্য কবরস্থান। এই উত্তর-দক্ষিণের মাঝখানের অংশটিতে অবস্থিত হল এই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ/স্তম্ভ। বর্তমানে এটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে।
অন্যদিকে, ১৯৯৯ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকটস্ যৌথভাবে স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আহবান করে। ২২টি নকশার মধ্যে স্থপতি ফরিদউদ্দীন আহমেদ ও স্থপতি জামি-আল-শফি প্রণীত নকশাটি নির্বাচিত হয়। গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব লাভ করে। এ কাজ ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিন বছর সময়ে সম্পন্ন হয়। তবে এখন দুটি স্মৃতিসৌধেরই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এ দুটি স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোন ধরনের বরাদ্দ বা উদ্যোগ নেয়া হয় না। কিন্তু প্রতি বছরের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগে এটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নানাভাবে সাজানো হচ্ছে। এরপর আর কোন খবর থাকে না। বর্তমানে এটি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় সারা বছরই অবহেলা আর অরক্ষিত অবস্থায় থাকে রাজধানীর দুই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। তবে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর আগে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরমধ্যে বছরের অন্যান্য সময় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি কিছুটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলেও রায়েরবাজারে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের থাকে অবহেলিত অবস্থায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৮ কোটি টাকা খরচ করে ১৯৯৯ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল এ স্মৃতিসৌধ। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই দৃষ্টিনন্দন এ সৌধটির রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেই। জানা গেছে, রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বরাদ্দ নেই। তবে এর তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ বাবদ তাদের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। অন্য তহবিল থেকে টাকা নিয়ে দিবসের আগে এটি ঘষামাজা করে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত করা হয় মাত্র।
কয়দিন আগেও দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধ ও আশপাশের এলাকা অপিরচ্ছন্ন। অযত্ম আর অবহেলার কারণে এটি বুঝার উপায় ছিলনা যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সৌধ এলাকার প্রহরী শামসুজ্জামান বলেন, বখাটে ছেলেরা যখন-তখন এখানে ঢুকে পড়ে। তাদের বাধা দিয়েও কোনো কাজ হয় না। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নির্মাণের পর থেকেই শুধু ১৪ ডিসেম্বর ঘিরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে। সারা বছর আর কোনো খবর থাকে না।
এদিকে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, কাল কাল শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ওই দিন দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। দিবসটির পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে দিবসটিতে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।