ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




পশ্চিমাদের প্রতি পুতিনের হুঁশিয়ারি কি বার্তা বহন করছে
রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশ: রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৫০ পিএম  (ভিজিটর : ১১০)
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উৎপাদন খাতে আট শতাধিক কোম্পানি গড়ে উঠেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর তিন বছর হতে চলেছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে আকাশপথে জোরালো হামলা চালানো হয়। ব্যবহার হয় ড্রোনও। পরবর্তীতে স্থল আর সমুদ্র যুদ্ধের বিস্তার ঘটে। মোতায়েন করা হয় ড্রোনবিধ্বংসী প্রযুক্তি। সেই সঙ্গে যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও ক্রমেই বাড়ানো হয়েছে।রাশিয়া ও ইউক্রেন-যুদ্ধরত দুপক্ষের মধ্যে সাধারণ একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। সেটি হলো, উভয়ই যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেননা এতে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়। যুদ্ধক্লান্তির যে প্রবণতা, সেটাও থাকে না। যুদ্ধ যত এগিয়েছে, ইউক্রেনের বাহিনী তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত ইউনিটগুলো আবারও পূর্ণ করার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়েছে। আর রুশ বাহিনী ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলে টিকে থাকতে উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে জটিল হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। যুদ্ধটা মূলত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে হলেও এতে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বৈশ্বিক এক যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

 হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, দরকার হলে পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলা চালাতে পিছপা হবেন না তিনি। পশ্চিমাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সম্প্রতি রাশিয়ার ভূ-খণ্ডে হামলা চালায় ইউক্রেন। তার পাল্টায় ইউক্রেনের নিপ্রো এলাকায় নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রথমে একে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মনে করা হলেও পরে মস্কো জানিয়েছে, সেটি নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। 

এই ক্ষেপণাস্ত্রও আইসিবিএমের মতো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে বলে জানিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ার ভূ-খণ্ডে হামলার অনুমতি দিলে তার পরিণতি ভালো হবে না বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাঁর কথায় পাত্তা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা আরও বাড়ানোর পথ বেছে নেওয়ার পর এবার সরাসরি পশ্চিমে হামলার সম্ভাবনা নাকচ না করার কথা জানালেন তিনি। ৩৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হানার আগেই রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, শত্রুরা যা লক্ষ্য করেছিল, তা অর্জন করতে পারেনি। আর রাশিয়ার ওপর হামলা চালাতে যেসব দেশ তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, ওই দেশগুলোর সামরিক স্থাপনায় হামলার বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে মস্কো। পুতিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম ‘ওরেশনিক’। এটি মধ্যপাল্লার একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভাষ্যমতে, সেটি ছিল মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। নিপ্রো শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে কিয়েভের মিত্ররা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে এ হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। এবার ওই হামলা নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ন্যাটো। চলতি মাসেই বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা গুরুত্ববহ নয় বলে মনে করেন ন্যাটোর একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের সক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্রের ব্যবহার যুদ্ধের গতিপথ বদলে দেবে না। আর ইউক্রেনকে ন্যাটো যে সমর্থন দিচ্ছে, তাতেও কোনো বাধা আসবে না'।

এদিকে যুক্তরাজ্যের অনুমতির পরই দেশটির তৈরি দূরপাল্লার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়াল যুক্তরাজ্য। ইতিহাসে প্রথমবারের তো যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তিশালী এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলো। তাই এই হামলাকে নজিরবিহীন বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু নজিরবিহীন নয়, আইসিবিএম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। এর আগে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। তখনই এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মস্কো। এরপর এই হামলা চালাল দেশটি। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে প্রথম আরএস-২৬ রুবেঝ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করে সফল হয় রাশিয়া। এর উচ্চতা ৪০ ফুট। ওজন ৩৬ হাজার কেজি। একটি আরএস-২৬ রুবেঝ ক্ষেপণাস্ত্র ৮০০ কেজি ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে জো বাইডেন অনুমতি দেওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে রাশিয়া। 

রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘কেইউবি-এম’ নামের এসব আশ্রয়কেন্দ্র পারমাণবিক বোমা হামলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দিতে পারে। যেসব পরিস্থিতি থেকে আশ্রয়কেন্দ্র গুলো সুরক্ষা দিতে পারে, সেগুলো হলো: বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবন থেকে নেমে আসা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব। 

এমন আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে বর্তমান কোনো সংকটের সম্পর্ক নেই বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে দেশটিকে দেওয়া দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া আখ্যা দিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, যদি সত্যি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়, তবে এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে মস্কো। 

গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বলেছে, ভ্রাম্যমাণ এসব আশ্রয়কেন্দ্র নানাবিধ কাজের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো লোকজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় এটিকে একধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউট বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সহজেই ট্রাকে পরিবহনের উপযোগী এবং এতে পানি সরবরাহের সংযোগ দেওয়া সম্ভব। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ বরাফাচ্ছাদিত এলাকাতেও স্থাপন করা যাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্র। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সহস্রতম দিনে এ হামলা চালানো হয়। এমন হামলা চালানো হলে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে দেশটি। তাই এ হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাইডেনের অনুমতির পর ইউক্রেন যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে, সে আশঙ্কা আগেই করছিল রাশিয়া। সে অনুযায়ী, নিজেদের পরমাণুনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। 

শুধু তা-ই নয়, কোনো জোটের সদস্য দেশ যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পুরো জোটই এই আগ্রাসন চালিয়েছে বলে বিবেচনা করতে পারবে ক্রেমলিন।৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী জানুয়ারিতে তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে কিয়েভকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওই সবুজ সংকেত দেন বাইডেন।

এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে সংঘাতের ধরন বদলাবে না কিংবা কিয়েভকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া থেকে ন্যাটোও পিছু হটবে না। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মুখপাত্র ফারাহ দাখলাল্লাহ একথা বলেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া মধ্যবর্তী পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সাধারণ নাগরিক এবং ইউক্রেনের মিত্রদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তবে ন্যাটো মিত্ররাও ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়া থেকে পিছুপা হবে না। ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ভেলারি ঝালুঝনি দাবি করেছেন, বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান মিত্রদের সরাসরি যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাই নির্দেশ করছে। তার সাথে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে জটিল হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 





আরও খবর


সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]