বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ ডে' (স্নাতক গবেষণা দিবস) উদযাপন শুরু হয়েছে।
৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে টিএসসি প্রাঙ্গনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
'রিসার্চ ফর রিফরমেশন' তথা 'সংস্কারের জন্য গবেষণা'- প্রতিপাদ্য নিয়ে উদযাপিত গবেষণা সংসদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং স্নাতক গবেষণা দিবসের আয়োজনে ছিলো কেক কাটা, বেলুন উড্ডয়ন, রিসার্চ র্যালি, রিসার্চ টক এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি৷
সকালে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। রিসার্চ টক ও অতিথিদের আলোচনা পর্বের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। পরবর্তীতে কেক কেটে ও বেলুন উড্ডয়নের পর্ব চলে এবং সবার শেষে রিসার্চ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্নাতক শিক্ষার্থীদের গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং স্নাতক গবেষণার ধারণা এদেশে বিকশিত করার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, সহযোগী অধ্যাপক শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ।
এসময় তিনি ২৪' এর গনঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গবেষণার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা উত্থাপনের মাধ্যমে তিনি গবেষণামূখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও " রাষ্ট্র বিজ্ঞান " এবং " রাজনীতি " প্রসঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, " মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক জীব, তবে রাজনৈতিক আলোচনা হতে হবে গঠনমূলক এবং জনকল্যাণমুখী। "
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থাানের শহিদদের স্মরণ করার মধ্যদিয়ে।
এরপর সভাপতি ফাহিম হাসান মাহদীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া আয়োজনে তরুণ গবেষকদের উৎসাহিত করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মডারেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুরুল করিম, অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের একনিষ্ঠ একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি সংগঠনটির ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। স্বীয় মেধা ও শ্রম দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের। এ পর্যায়ে তিনি " ব্রেইন ড্রেইন " বিষয়টিকে " রিভার্স ব্রেইন ড্রেইন " এ পরিণত করবার আশা ব্যক্ত করেন। এছাড়া গবেষণাবিষয়ক নানা দিকনির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
স্নাতক গবেষণা দিবস কী এবং কেন শুরু করা হলো এবং এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের আহ্বায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম সাদেক। গবেষণা ভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ তৈরিতে গবেষণাকে প্রধান উপজীব্য করে তিনি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন, একই সাথে স্নাতক গবেষণা দিবস ( undergraduate Research Day) পালনের মূল লক্ষ্য এবং এর উপযোগিতা ব্যক্ত করে রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে গবেষণার ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখেন মো. জহির রায়হান, প্রভাষক, ব্যাংকিং ও ইন্সুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাবেক সভাপতি নাসরীন জেবিন, বর্তমানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আরও বক্তব্য রাখেন গবেষণা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, গবেষণা সংসদের সাবেক রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর মুকসিদা জাহান উপমাসহ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, স্নাতক শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা, গবেষণাভীতি দূর করা, গবেষণা ক্যারিয়ারে ধাবিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের যাত্রা শুরু হয়। মূলত এটি প্রথম স্নাতক শিক্ষার্থী তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সরাসরি কাজ শুরু করা প্রথম গবেষণা সংগঠন, যার প্রভাবে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই রকম স্নাতক গবেষণা সংগঠন গড়ে উঠে। যারা দেশে একটি আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করে চলেছে। মূলত এই উদ্যোগকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং স্নাতক গবেষণার (আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ) নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকে প্রথমবারের মতো আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ ডে (স্নাতক গবেষণা দিবস) পালন করা শুরু হয়েছে। যে দিবসটি আগামীতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল গবেষণা সংসদ একযোগে পালন করবে এবং জাতীয় পর্যায়ে এই উদ্যোগের গুরুত্ব প্রচার শুরু করা হবে।