শীত আসলেই পিঠা পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে। পায়েস, পিঠা সবকিছুতেই ব্যবহার হয় খেজুরের রস এবং গুড়। অনেকেই মনে করেন, চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল গুড়। শীতকালের ডায়েটে খেজুরের গুড় ও রস খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে কি গুড়ের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়? কী বলছেন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা?
পুষ্টিবিদদের মতে, আয়রন, ভিটামিন সি, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজে সমৃদ্ধ গুড়। তাই শরীরে খনিজের ঘাটতি পূরণ করতে পরিমিত পরিমাণে গুড় খাওয়াই যায়। তবে খেজুর গুড় না কি খেজুরের রস, কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? পুষ্টিবিদেরা বলেন, ‘‘শীত পড়তেই বাজারে খেজুর গুড়ের রমরমা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে গ্রাম ছাড়া ভালো খেজুরের রস এখন পাওয়া মুশকিল।
খেজুর গুড় হোক বা রস, দুটিরই উপকারিতা ও অপকারিতা দুই-ই আছে। খেজুরের রসে আয়রন, পটাশিয়াম ভালো মাত্রায় থাকে। এই রস হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শীতে যাদের ঠান্ডা লাগার ধাত রয়েছে, তাদের জন্যও এই রস খাওয়া উপকারী। যাদের শরীরে পটাশিয়াম কম কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারাও খেজুরের রস খেলে উপকার পাবেন। অবশ্য খেজুরের রস টাটকা খেলে তবেই উপকার পাওয়া যাবে। এই রস খেতে হলে ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগেই খেয়ে নেওয়া ভালো। তবে খেজুরের রসে ভালো মাত্রায় শর্করা থাকে, তাই ডায়াবেটিস থাকলে এই রস খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অ্যাজমা কিংবা কিডনির সমস্যা থাকলে এই রস না খাওয়াই ভালো।’’
খেজুরের রসের মতো, খেজুরের গুড়েও কিন্তু পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ভালো মাত্রায় থাকে। খেজুরের গুড়ের তুলনায় রস খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর। খেজুরের গুড়ে বেশির ভাগটাই চিনি থাকে। তাই এই গুড় বেশি মাত্রায় খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা কিংবা যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তারাও এই গুড় খেতে পারেন, তবে খুব পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে, শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকলে কিংবা কিডনির সমস্যা থাকলে গুড় খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। তবে, খেজুরের রস তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর।
সকাল সকাল খেজুরের রস খেলে কি তা শরীরের জন্য ডিটক্স পানীয় হিসাবে কাজ করে?
খেজুরের রস ভোরের দিকেই খাওয়া ভালো। কারণ, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস ও সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে এসে এই রস তাড়িতে পরিণত হয়। গ্রামের দিকে গেলে খেজুরের রস একবার ফুটিয়ে বিক্রি করা হয়, সেটি খাওয়াও স্বাস্থ্যকর। চিকিৎসকরা বলেন, ‘খেজুর রস খেলে শরীর ডিটক্স হয়, এমনটা কিন্তু নয়। এই রস খাওয়া পেটের পক্ষে ভালো। মাঝেমধ্যে সকালের দিকে খাওয়া যেতে পারে। তবে রোজ খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।’
খেজুর রস হোক কিংবা গুড়, শীতের রোজের ডায়েটে রাখা কখনো উচিত নয়। মাঝেমধ্যে খাওয়া যেতে পারে। তবে সেই গুড় কতটা স্বাস্থ্যকর, তা নির্ভর করবে তার বিশুদ্ধতার উপর। বাজারে এখন ভেজাল গুড়ের ছড়াছড়ি। তাই গুড় কেনার আগে তা ভালো কি না যাচাই করে নিন। ভালো জায়গা থেকে গুড় কিনতে হবে।