প্রকাশ: শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:২৪ এএম (ভিজিটর : ১২১)
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এতে অধিকাংশ পয়োবর্জ্য বিভিন্ন পথে আশপাশের খাল ও নদীতে চলে যাচ্ছে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার পরেও ঢাকা ওয়াসা পানির সমপরিমাণ পয়োনিষ্কাশন (সুয়ারেজ) বিল প্রতিমাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছে। বছরের পর বছর এভাবে চলে আসলেও নির্বিকার গ্রহকরা। তবে গত আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব থাকাকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ওয়াসা বলছে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পুরো ঢাকা পয়োনিষ্কাশনের আওতায় চলে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরী এলাকায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি ওয়াসার পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে। তবে পয়োনিষ্কাশনের লাইন রয়েছে মাত্র ৯৩০ কিলোমিটার। অধিকাংশ এলাকায় পয়োনিষ্কাশন সেবা দিচ্ছে না ঢাকা ওয়াসা। অথচ এসব এলাকা থেকে ঠিকই বিল নেয়া হচ্ছে। গত ছয় বছরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি পয়োনিষ্কাশন বাবদ বিল করেছে ঢাকা ওয়াসা। এরমধ্যে যেসব এলাকায় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই সেসব এলাকা থেকেও বিল নেয়া হয়েছে। এসব এলাকার গ্রহকরা বলছেন, সেবা না দিয়েও ওয়াসা আমাদের থেকে বিল আদায় করছে। আমরা সেবা না পেলে আর বিল দিব না এমন মন্তব্য করে ডেমরার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানির লাইন থাকলেও আমার এলাকায় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু প্রতিমাসে পানির বিলের সাথে পয়োনিষ্কাশনের বিল ঠিকই নিচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা বারবার আপত্তি জানালেও ওয়াসা কোন কর্ণপাত করছে না। ফলে আমরা চাই আমাদের এ সেবা দিয়েই যাতে ওয়াসা বিল নেয়। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে মহানগরীর কিছু এলাকায় পয়োনিষ্কাশন নালা তৈরি হয়। এরপর কিছু নালা তৈরি হলেও রাজধানী যেভাবে প্রসারিত হয়েছে, সেভাবে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়নি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি মিশছে খাল,নদী, নালা ও লেকে। দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি অঞ্চলে স্যুয়ারেজ লাইন আছে। বাকি চারটি অঞ্চলে আংশিক স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে। আর চারটি অঞ্চলে স্যুয়ারেজ লাইন নেই। এ চারটি অঞ্চল হলো বৃহত্তর উত্তরা, বৃহত্তর মিরপুর (অঞ্চল ৪ ও ১০) ও বারিধারা এবং আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৮)। আংশিক স্যুয়ারেজ লাইন আছে লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৩), মহাখালী, গুলশান, তেজগাঁও ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৫), জুরাইন-যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৭) এবং মতিঝিল-খিলগাঁও ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৬)। তবে এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি ভবনের বিপরীতেই স্যুয়ারেজের বিল আদায় করছে ঢাকা ওয়াসা। এমনকি পানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যুয়ারেজ বিলও বছর বছর বাড়িয়েছে ওয়াসা।
রাজধানীর পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। তবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক রেখেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। কিন্তু রাজধানীর ৭৫ শতাংশ নেই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। ফলে ঢাকাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ঢাকা ওয়াসা বলছে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় পয়োনিষ্কাশন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে ঢাকা ওয়াসা। এর আওতায় ঢাকাকে পাঁচ ভাগ করে পাঁচটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিটিপি) তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুটির কাজ চলছে ও একটির প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। বাকি তিনটির কাজ শিগগিরই শুরু হবে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে পুরো ঢাকার পয়োনিষ্কাশন জটিলতা আর থাকবে না বলে ওয়াসা জানিয়েছে। ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বলেন, ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় পয়োবর্জের লাইন নেই। ফলে ঢাকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেই পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করার কাজ চলছে। তবে তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পয়োবর্জের লাইন আছে, সে অনুযায়ী বিল আদায় করা হচ্ছে।
স্থাপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। আর নদীগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে হলে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কেবল রাজধানীতেই নয়, বিভাগীয় জেলা-উপজেলা শহরেও মানসম্মত ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে বর্ষাকাল ছাড়াও বছরব্যাপী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষত স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ও নারী-শিশুদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। সুষ্ঠু নগর ব্যবস্থাপনার অন্যতম শর্ত স্যুয়ারেজ তথা মানসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে ঢাকার চতুর্দিকের খাল ও নদ-নদীর দূষণমুক্ত পানি নিশ্চিত করার এবং পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ক্ষেত্রে জোর দেয়ার বিকল্প নেই। আবাসিক এলাকায় স্যুয়ারেজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে দেয়া এবং ভবন নির্মাণের সময় ড্রেনের জায়গা বন্ধ করে ফেলা হচ্ছে কিনা, সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি দরকার।