পবিত্র দুই মসজিদ মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীকে ঘিরে নতুন একটি নির্দেশনা জারি করেছে সৌদিআরব সরকার ।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুই পবিত্র মসজিদের বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সি এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঘোষণা দিয়েছে, এ মসজিদগুলো ও তাদের প্রাঙ্গণে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি মূলত মসজিদের অভ্যন্তরীণ অডিও সিস্টেমের ওপর নির্ভর করে আজান ও খুতবার কার্যক্রম পরিচালিত করতে বলা হয়েছে ।
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনের প্রধান কারণ হলো, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে ইবাদতের সময় একটি শান্ত, মনোযোগপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। নামাজের সময় যে আধ্যাত্মিক সংযোগ তৈরি হয়, তা কখনোই শব্দের কারণে ব্যাহত হওয়া উচিত নয়। দুই পবিত্র মসজিদে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ইবাদত করতে আসেন। এমন একটি পরিবেশে যদি বাইরের লাউডস্পিকারের শব্দ যুক্ত হয়, তাহলে তা ইবাদতকারীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
লাউডস্পিকার বা হেন্ডমাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তা শুধুমাত্র একটি নিয়ম নয়; এটি মুসলমানদের ইবাদতকে আরও অর্থবহ ও গভীর করার একটি প্রচেষ্টা। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে গৃহীত এ পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কেবল মসজিদের ভেতরের পরিবেশকেই নয়, আশেপাশের এলাকাগুলোকেও শব্দ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। বিশেষ করে যারা মসজিদ থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করেন, তাদের জন্য লাউডস্পিকারের অতিরিক্ত শব্দ অনেক সময় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াত। নতুন এ নির্দেশনা তাদের জন্যও একটি স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণ ইবাদতের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বেও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। হজ ও ওমরাহর সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান যেমন অ্যাপ-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে, তেমনি পবিত্র স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের জন্য উন্নত সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার মান বজায় রাখা এবং নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী মুসলিমদের অতি পবিত্র স্থান। কাবা শরিফের অবস্থানের কারণে মসজিদুল হারাম মুসলমানদের কিবলা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মুসলমান এখানেই নামাজ আদায় করেন আর ওমরাহ পালন করেন। অন্যদিকে, মসজিদে নববী রসুল (সা.)-এর মসজিদ, যেখানে তিনি নিজ হাতে ইবাদতের স্থান তৈরি করেছিলেন। এ মসজিদে তার রওজা মুবারকও অবস্থিত, যা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের জন্য গভীর আবেগের স্থান।
মুসলমানদের জন্য ইবাদত শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কার্যক্রম নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, আত্মার সঙ্গে আল্লাহর সংযোগ স্থাপন ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। দুই পবিত্র মসজিদে এমন একটি পরিবেশ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেখানে ইবাদতকারীরা আল্লাহর সঙ্গে তাদের গভীর সংযোগ অনুভব করতে পারেন। এ পরিবেশে কোনো ধরণের শব্দ বা ব্যাঘাত ইবাদতের গভীরতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
পবিত্র মসজিদগুলোর মর্যাদা ও গুরুত্ব বজায় রাখতে সৌদি কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলে অনেকে মনে করেন ।