রাজনৈতিক মামলায় ঘরছাড়া সিলেট আওয়ামী লীগের তিন ডজন শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ আর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের পলায়নে অনেকের পরিবার পরিজন পড়েছেন বিপাকে। সন্তানদের লেখাপড়া বাজার সদাই থেকে শুরু করে চিকিৎসাকাজে পর্যন্ত চরম ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায় পড়েছেন এসব নেতাদের পরিবার। যেসব নেতা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত ছিলেন তাদের সেসব প্রতিষ্ঠানও পড়েছে দো’টানায়। আর এমনি পরস্থিতিতে কী করবে তাদের পরিবার, আর কী করবেন তাদের অনুসারীরা তা নিয়ে চরম অনিশ্চনায়তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের শেষ লগ্নে গত ৪ ও ৫ আগস্ট সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনঘন্টা বাজে তখন বেসামাল হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ৫ আগস্টকে হাসিনার পদত্যাগের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েন সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের বাসা বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট আর আগুন দেয়ার সময় দিক বিদিক ছুটেন আওয়ামীলীগ নেতারা। কর্মীরাও যে যার মতো করে নিরাপদ আশ্রযে ছুটেন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট সিলেটের যেসব নেতাদের বাসা বাড়ি রোষানলে পড়ে তাদের মধ্যে মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে অঙ্গ-সহযোগি এবং ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সিলেটের নেতারা।
বিকেল থেকে রাত অবধি হামলা আর ভাঙচুর চলে সবখানে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গতকাল সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের অন্তত ২৫ জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসায় হামলার পাশাপাশি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়; সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা; বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট ও লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। এ ছাড়া সিলেট জেলা পরিষদ এবং নগর ভবনেও হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এর বাইরে সিলেটের পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় কারাগারে ভাঙচুরের চেষ্টা হয়েছিল বলে দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নগরের বন্দরবাজার এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ভাঙচুরের শিকার নগর ভবনের সামনে পড়ে থাকা কাচ পরিষ্কার করছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। অন্যদিকে বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট ও লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়িও পুড়ে গেছে।
একাধিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কোনো জরুরি কাগজপত্রই আর অবশিষ্ট নেই। আসবাবসহ সব জরুরি কাগজ পুড়ে ছাই হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট ও লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ক্ষেত্রেও। কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও ফাঁড়িগুলো পুণরায় সংস্কার করে চালু করা হলেও জরুরি কাগজপত্রের অভাবে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই পৃথক মিছিল নিয়ে একদল মানুষ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত নেতাদের বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। হামলা-ভাঙচুর হয়েছে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলরের বাসভবনেও।
এরকম ঘটনায় আতংক এখন সিলেটের আওয়াম লীগ সমর্থকদের ঘরে ঘরে। যদিও সমর্থকদের বাসা বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেনি তবু এসব ঘটনা নেতাদের বাসায় ঘটেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলেই। এছাড়া সিলেটে আওয়ামী ঘরানার যেসব সাংবাদিক হামলা এবং মামলার শিকার হচ্ছেন তাদের পরবিবার পরিজনও উদ্বেগ উৎকন্ঠায দিন পার করছেন।
তবে এ সব ব্যাপারে সিলেট মহানগর জামাতের আমীর ফখরুল ইসলাম বলেন, সাধারণত যারা জনগণের উপর নিপীড়ন করেছে, নির্যাতন করেছে, এই মানুষগুলো জনসম্মুখে এলে স্বভাবতই একটু প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা। তারা কেন নিজের পক্ষ থেকে ভয় তৈরি করবে, আর কেনই বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে পালিয়ে যাবে। এটার জন্য দায়ী তো তারা নিজেই। যারা অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। পুরো বিষয়টি আইনগতভাবেই সমাধান হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, যারা প্রকৃত দোষী তারা শাস্তি পাবে। আর যারা দোষী নয়, তাদের পালিয়ে বেড়ানোর কোনো দরকার নেই।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, আমার পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত বা দলীয় মেসেইজের কোনো বিষয় নয়। যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও আওয়ামীলীগের দোসর, যারা মানুষের ক্ষতি করেছে, তাদেরকে আইনগতভাবে প্রশাসন দেখছে। এরাই বিভিন্ন জায়গায় একটার পর একটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। যারা ব্যবসা বাণিজ্য করছে নিয়ম মেনে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। ১৪ বছর থেকে যারা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রশাসন নিবে। এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই, আমরা একটি রাজনৈতিক দল, এ ব্যাপারে আমাদের মেসেইজ দেওয়ার কিছু নেই।