প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:২৯ পিএম (ভিজিটর : ৩৫৫)
গণঅভ্যুত্থানের আগেরদিন ৪ আগস্ট বগুড়ায় আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আশরাফুল আলম। মামলার এজাহারে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান।
অভিযুক্ত আশরাফুল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি মোকামতলা ভাগকোলা এলাকার মৃত বছির উদ্দিন মুন্সির ছেলে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গা-ঢাকা দেন আশরাফুল আলম। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুলিবর্ষণ ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজাহারে আশরাফুলকে আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা ও হামলাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুইজন বাদী।
২৩ নভেম্বর বগুড়া সদর থানায় মামলা (নম্বর ৭৩) দায়ের করেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মেহেদী হাসান। এর আগে ১০ অক্টোবর সদর থানায় (নম্বর ২৫) বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন বগুড়া শহর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রকি।
স্থানীয় সুত্র জানায়, গা-ঢাকা দেওয়া শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম রাজনৈতিক খোলস পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তিনি বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও শিবগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট ঘনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি একসময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সুযোগ বুঝে জাপা এমপির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে আশীর্বাদপুষ্ট হন। আওয়ামী লীগ ও জাপা এমপির প্রভাব বিস্তার করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোকামতলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া বিএনপির বর্জন করা আওয়ামী লীগ ঘরনার সংসদ নির্বাচনে ড্যামি প্রার্থী (বিএনপির বহিস্কৃত নেত্রী) বিউটি বেগমের ঘনিষ্ঠ সমর্থক বনে যান আশরাফুল। তার বিরুদ্ধে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে আশরাফুলের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ী আবু সাইদ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত মেহেদী হাসান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ৪ আগস্ট একদফার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকায় মিছিল লক্ষ্য করে মুহু মুহু ককটেল বিস্ফোরণ করে হামলাকারীরা। মামলার ৩৩নং আসামি আশরাফুল আলমের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে আন্দোলনরত অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। ৮/১০টি গুলি মেহেদীর পিঠে লাগে। আশরাফুলের সঙ্গে থাকা আসামিরা গুলিবর্ষণ করলে আরও ১০/১২টি গুলিবিদ্ধ হন মেহেদী। একটি গুলি তার মাথার পেছনে লাগে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ মামলায় ১৬৮ জনের নাম উল্লেখ ও ১০০/২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বিউটি বেগমসহ ৬জনকে হামলায় নির্দেশদাতা ও হুকুমের আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন মামলার বাদী।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন জানান, মামলার আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হলেই গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে। মামলার তদন্ত চলছে, আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।