প্রকাশ: সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৪:৪৬ পিএম (ভিজিটর : ২০১)
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আমি সবসময় কাজ করে এসেছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সোমবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিনিধি দলের দাবি, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করা।
সাক্ষাৎকালে গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও তামাক কর বৃদ্ধি: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন ও সাংবাদিকদের দাবি সংবলিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বি।
মতবিনিময়কালে হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তামাক ব্যবহার হার সবচেয়ে বেশি (৩৫.৩%) বাংলাদেশে। তাছাড়া দেশে প্রতিনিয়ত প্রায় চার কোটি মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন (গ্যাটস ২০১৭)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজন শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।
এ জন্য বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হলে আইনের ছয়টি ধারা সংশোধন করতে হবে। ধারাগুলো– আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা। অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশনী নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যে কোন ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
উল্লিখিত ধারাগুলো সংশোধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরপর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্ব কমবে এবং কর্মসংস্থান হারাবে এমন অপতথ্য ছড়িয়ে আইন সংশোধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন (২০০৫) ও তা সংশোধন (২০১৩) করার ফলে সিগারেট থেকে সরকারের রাজস্ব কমেনি বরং বেড়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পর পরবর্তী ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.৯৭ শতাংশ এবং ৩৭.৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালের সংশোধনীর পর পরবর্তী ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৫১ শতাংশ এবং ৪৬.৫২ শতাংশ। তাই অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় প্রদান এবং নতুন প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচাতে প্রস্তাবিত আইন দ্রুত পাস করা প্রয়োজন।
বৈঠককালে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন। সাক্ষাৎকালে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্’র (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর।