প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৪৩ এএম (ভিজিটর : ৯২)
গোল আলু দেশে একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি বহুবিধ উপায়ে খাওয়া যায়। একসময় ভাতের ওপর চাপ কমানোর জন্য বেশি করে আলু খাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে প্রচারণাও চালানো হয়েছিল বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান।’ এক-এগারো-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এক অনুষ্ঠানে অভ্যাগতদের আলু দিয়ে তৈরি ৪৫ ধরনের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন। ঘটনাটি ওই সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল।
সরকারের প্রচারণার ফলে নয়, নানা কারণেই বিলেতি আলু বাড়িয়েছেন কৃষক। এটিকে কেউ এখন আর ওই নামে চেনে না। গোল আলুও বলে না, শুধুই আলু। হতদরিদ্র প্রান্তিক মানুষ থেকে শতসহস্র কোটি টাকার মালিক, ধনকুবের সবার পাতেই আলু একপ্রকার অপরিহার্য সবজি। কোভিডকালে ত্রাণ সহায়তায় আলু দেয়া হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ ও বাজারজাতকরণের সুবিধার জন্য দেশের কয়েকটি জেলায় আলুর চাষ বেড়েছে। বন্যার কারণে সব সবজির দাম বেড়েছে। এখন আলুর দামও বেড়ে যাওয়ায় সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে। আলুর দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। এজন্য তারা বাজারে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। হিমাগার মালিকদের মজুতপ্রবণতায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। প্রতি বছর সাধারণত এই সময় দেশে আলুর কিছুটা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু আগে থেকেই পণ্যটির সংকট। এ অবস্থায় আলুর দাম স্থিতিশীল রাখতে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্যোগ নেয়া দরকার। দেশে প্রায় এক কোটি টনের মতো আলু উৎপাদিত হয়। অথচ হিমাগারগুলোর মোট ধারণক্ষমতা কমবেশি ২৩ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদিত আলুর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আলু নষ্ট হয়।
কৃষককে নিজ বাড়িতে সংরক্ষণ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করা গেলে আলুর নষ্ট হওয়া কমে যাবে। সুতরাং আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, দামও থাকবে সাধারণ মানুষের নাগালে। মজুত করা ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির তৎপরতার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। আলু পুষ্টির দিক দিয়ে ভাত ও গমের সঙ্গে তুলনীয়। এছাড়া খাদ্য হিসেবে আলু সহজেই হজম হয়। আলুতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশক্তি রয়েছে। তাছাড়া ভিটামিন ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়। আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানারকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত করে চিপস বিক্রি করে গ্রামীণ নারী ও উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। আমরা আশা করব বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আলুর দামে স্থিতিশীলতা আনতে পদক্ষেপ নিবে।