ই-পেপার বাংলা কনভার্টার সোমবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ই-পেপার সোমবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস : ডায়াবেটিস ও সুস্থ্যতা
সানজিদা শারমীন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২:৩৮ পিএম  (ভিজিটর : ১৩৩)
বর্তমান সময়ের গুরুত্তপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং এর দ্বারা সৃষ্ট জটিলতায় ভ‚গছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী সারাবিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ২০১৪ সালে ৪২২ মিলিয়নের বেশিতে এসে ছাড়িয়েছে যা ১৯৮০ সালে ১০৮ মিলিয়ন ছিলো। এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান রয়েছে। 

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রলের রিপোর্ট অন্যযায়ী বর্তমানে ২০২৪ সালে সারাবিশ্বে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৩ মিলিয়ন। নগরায়ন, অসাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্কৃয়তা, স্থুলতার হার বৃদ্ধি এই ক্রমবর্ধমান হারের পিছনে বিশেষ অবান রাখছে। এখনই সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে এই বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এই রোগের কার্যকর ব্যাবস্থাপনা ও প্রতিরোধের জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি অত্যাবশ্যক। এই লক্ষে প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসাবে আখ্যায়ীত করা হয় এবং সারাবিশ্বে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালানো হয়ে থাকে যা ১১০ টিরও বেশি দেশে এবং এক বিলিয়নেরো বেশি মানুষের কাছে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত তথ্য পৌছে থাকে।

২০২৪-২০২৬ সাল পর্যন্ত এই দিবসের শ্লোগান হবে “ডায়াবেটিস ও সুস্থ্যতা”। ডায়াবেটিস হওয়ার পরেও কিভাবে সুস্থ্য সাভাবিক জীবনযাপন করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌছানো, ভ‚ল ধারনার অবসান ঘটানো, কুসংস্কার ূর করা এবং সঠিক ব্যাবস্থাপনা গ্রহনে মানুষকে উৎসাহী করার লক্ষে বিভিন্ন শিক্ষামুলক উদ্দোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে এই নিটিকে কেন্দ্র করে। এই প্রচারাভিযানগুলি ঝুঁকির কারণ, উপসর্গ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্বের উপরেও ফোকাস করে। 

ডায়াবেটিস প্রোতিরোধে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বেয়াম ও জীবনব্যাবস্থার পরিবর্তন গুরুত্তপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঔষধের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন যার মধ্যে রয়েছে- কায়িকপরিশ্রম, রক্তে শর্করার নিরীক্ষণ, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ। 

ডায়াবেটিস ব্যাবস্থাপনায় খাদ্যের ভ‚মিকাঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালনে করে। আমরা যা খাই তা সরাসরি আমাদের রক্তে মিশে রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিক রোগির জন্য ঔষধের মতই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাপন ব্যাবস্থা গুরুত্তপূর্ণ। খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্য, চর্বিহীন প্রোটিন, তাজা ফল-শাক- সবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাদ্য সর্বপরি একটি সুষম খাদ্য রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতশীল রাখতে সাহায্য করে।  

ডায়াবেটিসে খাদ্যতালিকা তৈরীতে লক্ষণীয় কিছু বিষয়- 
১. সর্বপ্রথম পদক্ষেপ চিনি-মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা। সবচেয়ে ভালো উপায় মিষ্টি না খাওয়ার অভ্যাস করা। তা করতে না পারলে চিনির সাবস্টিটিউট ব্যাবহার করা যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে ডায়াবেটিক রোওি মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারে, তবে সেটার পরিমাণ ও কোন অবস্থ্যায় খেতে পারবে তা ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে জেনে নিতে হবে।

২. লো-জি আই খাবার বেছে নেওয়া। যে সকল খাবার রক্তে শর্করার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ায় সেগুলোই লো-জি আই খাবার যেমন- পূর্ণ আঁশযুক্ত চাল, আটা, গম, ওটস, খোসা সহ তাজা ফল ও সবজি। এই খাবারগুলো রক্তে ধীরে ও পরিমিতভাবে শর্করার সরবরাহ করে বিধায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাত বেড়ে বা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। তাই ডায়াবেটিক রোগির শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করা লো-জি আই খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা জরুরী।

৩. খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। রোগির আদর্শ ওজন-উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ এবং রোগাবস্থার উপর ভিত্তি করে একেক রোগির জন্য খাদ্যের চাহিদা ভিন্ন হয়। একজন পুষ্টিবীদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের চাহিদা ও খাদ্যের নির্দষ্ট পরিমাণ স¤পর্কে জেনে নিয়ে সেটা মেনে চলা ডায়াবেটিক রোগির জন্য অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ণ।

৪. খাদ্যে সকল জরুরী খাদ্য উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেকে খাবার এতো কমিয়ে ফেলে যে, পরবর্তিতে দেখা যায় শরীরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ফলে ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি আরো নানারকম রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। একটি সুষম খাদ্য পারে এই সমস্যা ূর করতে। সকল পুষ্টি উপাানের সমন্বয়ে দৈনিক খাদ্য তালিকা তৈরি করে খাদ্য গ্রহণ করলে এই জাতীয় সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

৫. হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোধে অল্প অল্প করে দিনে পাঁচ থেকে ছয়টা মীল গ্রহণ করা। ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত রাতে বা ভোরের দিকে হাইপোগøাইসেমিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এর প্রতিরোধে শোবার আগে একটা হালকাব্লাক বা ড্রিঙ্ক খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে এবং রাতের দিকে ব্যায়াম বা হাটার পরিমাণ কম রাখা ভাল। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবনধারার পরিবর্তনঃ খাদ্যের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জীবনধারার কিছু পরিবর্তণ ডায়াবেটিস ব্যাবস্থাপনায় গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাঝে সর্বাধিক তাতপর্যপূর্ণ হল কায়িক পরিশ্রম করা। রোজ নিয়মিত হালকা থেকে মাঝারি শরীর চর্চা করা এবং অলস জীবনযাপন না করা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কায়িক পরিশ্রমের সর্বাপেক্ষা কার্যকরি ও সহজেই করা যায় এমন কিছু উপায় হল- হাটা, দৌড়ানো, সিড়ি ব্যাবহার করা, সাইকেল চালানো, জগিং করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ডায়াবেটিক রোগীদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা ভেদে দৈনিক হালকা থেকে মাঝারি কাজ কর্মের পাশাপাশি আধা ঘন্টা থেকে দের ঘন্টা হাটা আবশ্যক। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ব্যাবস্থাপনাও ডায়াবেটিসের ব্যাবস্থাপনায় অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।

 স্ট্রেস হরমন শরীরের ইন্সুলিনকে ইনসেন্সিটিভ করে রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেও মনোযোগী হতে হবে। মননশীলতা অনুশীলন, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে শরীরকে এর ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রেখে শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সক্ষম। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবার-প্রিয়জনের সাথে দিনের কিছু সময় কাটানোও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত সাস্থ্যপরীক্ষা ও রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে মানুষ তার অবস্থা স¤পর্কে জানতে পারে এবং ব্যাবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সমন্বয় এর জন্য নির্দেশনা স্থির করতে পারে। কোন জটিলতা তৈরির আগেই ডায়াগনসিসের মাধ্যমে সঠিক ব্যাবস্থা নিতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও ডায়াবেটিসের ব্যাবস্থাপনার একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ। ডায়াবেটিস একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। অনেকের জন্যই ডায়াবেটিস এর কারনে এত নিয়মকানুন মেনে চলা কঠিন এবং হতাশাজনক মনে হয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় নিয়মকানুন মেনে চলার পরেও রক্তের শর্করার মাত্রা সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তখন রোগীর হতাশায় পরে নিয়ম মাফিক চলা বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু এমনটা না করে সমস্যার ব্যাপারে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিলে ডায়াবেটিস থেকে সৃষ্ট জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়। সঠিক তথ্য জানা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা মেনে চলার মাধ্যমে সর্বপরি নিজের সাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী ও যত্নশীল হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিক ব্যাক্তি সফলভাবে একটি স্বাস্থ্যকর পরিপুর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। 

লেখক : জ্যেষ্ঠ্য পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক, উত্তরা সেন্টার-১







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]