প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:০০ পিএম (ভিজিটর : ১৫৩)
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২০২৪ সালের আলিম পরীক্ষায় মোট ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাশ করেনি। অথচ এই মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। তবুও পাশ করেনি অংশ্রগ্রহনকারী পরীক্ষার্থীরা। ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাদ্রাসাটিতে ছিল ১৪ জন শিক্ষক।
জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে সহকারী অধ্যক্ষসহ ১৪ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী রয়েছেন। প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন নিচ্ছেন সাড়ে ৩ লাক্ষাধিক টাকা। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে রেজাল্টের অবস্থা খুবই খারাপ। ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতা ও শিক্ষকদের চরম অবহেলায় বহু বছর ধরেই শিক্ষার্থী প্রায় শূণ্যের কোঠায়।
অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের কোটা ধরে রাখতে যুগ-যুগ ধরে ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো হয়। যে কারণে বিভিন্ন সময় ২-৫জন ছাড়া সকলেই অকৃতকার্য হয়ে আসছে। তবে, প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ক্ষোভের সাথে ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পরীক্ষার হল থেকে ভাড়া করা শিক্ষার্থীদের বহিস্কারও করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যে সকল শিক্ষকরা অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন তাদের থেকে সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ মঞ্জুরুল হক ১০ হাজার করে টাকা নিতেন বলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া জানান।
একাধিকবার সরেজমিনে গেলে এ মাদ্রাসায় ২-৬ জনের বেশী কখনোই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। এমনকি বইগুলো বিভিন্ন কক্ষে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাঠদান না দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকেও একস্থানে বসে খোশ গল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে।
সহকারী সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুম বিল্লাহসহ একাধিক শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের এমন দৈণ্যদশার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিদের দায়ী করছেন। ম্যানেজিং কমিটি আপনাদের পাঠদানে বাঁধা দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব কেউ দিতে পারেন নি।
স্থানীয়রা বলছেন, মাদ্রাসাটি প্রতিদিন খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা গল্পগুজব করে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যান। বছরের দুই এক সময় অফিসারেরা আসেন আবার চলে যান। প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নতি দেখলাম না। প্রতিষ্ঠানের এমন দৈণ্যদশা সম্পর্কে একাধিকবার লেখা লেখি হলেও কার্যতঃ কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুস্তুম আলী বলেন, ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর স্কুলে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ১৩ জন। একজনও পাস করল না, বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা প্রয়োজন।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুরুল কবির শিক্ষকদের নিকট থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জমি সংক্রান্ত দ্বন্দের কারনে মাদ্রাসার এ অবস্থা। পাঠদানে কেউ বাঁধা তো দেয়নি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর এ কে এম আবুল খায়ের বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও অভ্যান্তরীন বিভিন্ন কারনে মাদ্রাসাটির এ অবস্থা। আমি চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানের মান ফিরিয়ে আনার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।