ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




সরবরাহ সংকটের অজুহাত:
আলু প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা
এসএম শামসুজ্জোহা:
প্রকাশ: রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম  (ভিজিটর : ২৫৬)
বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ফসল আলু। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে এবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে আলুর বাজারে। খুচরায় গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ৮৫ টাকায় উঠেছে। এছাড়াও দেশে উৎপাদিত নতুন আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতেই এই সবজির উৎপাদন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় আর মাঠ থেকে এক কেজি আলু বিক্রি করেন কৃষকরা মাত্র ১৪-১৫ টাকায়। গত জুন থেকে হঠাৎ করেই আলুর বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। অক্টোবরের শেষে পাইকারিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন খুচরা পর্যায়ে এক কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলুর আড়তদার মো. সবুজ জানান, বাজারে আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় হিমাগারে আলুর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাঁট, বগুড়া, রাজশাহী ও রংপুরে আলুর খুব সংকট চলছে। বাজারেও সহজলভ্য নয়। প্রতিবছর আলুর মৌসুমের শেষে দাম বাড়ে। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই চড়া ছিল আলুর দাম। এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত হিমাগার মালিক, মজুতদার ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে কৃষকরা মাঠ থেকে আলু উত্তোলন করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছে তা বিক্রি করে দেন। এসব আলু মজুত করতে হিমাগারে রাখা হয়। একবার আলু হিমাগারে চলে গেলে জুন মাস থেকে বাজারে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দেয় মজুতদাররা। এই কৌশল অবলম্বন করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলুর দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মতে, সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। বাজারের দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ২৪ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বাজার করতে গিয়ে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তথ্যমতে, গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে; তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সরকারের নানা উদ্যোগের পর আলুর দাম আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। তাদের মতে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

 সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ তথ্যমতে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়াও দেশে উৎপাদিত নতুন আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখন আলুর কিছুটা সরবরাহ সংকট চলছে। যার কারণে পাইকারিতেই দাম বাড়তি। আগে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেনা গেলেও এখন কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে; তবুও বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। তিন দিনের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি মোকামে ভারতীয় আলুর দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকা বেড়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ সর্বোচ্চ পড়ে সাড়ে ১১ টাকা। পরিবহন ও হিমাগার খরচ যুক্ত করলেও প্রতি কেজিতে দাম সর্বোচ্চ ২০ টাকা হওয়া উচিত। অথচ খুচরা বাজারে সেই আলুর দাম ৮৫ টাকা। যা চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৌসুমের শুরুতেই মাঠের আলু সব বিক্রি করেছি ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই আলু বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে; অথচ এই লাভের অংশ কৃষকরা পান না। আলুর এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি শুধু কৃষক ও ক্রেতাদের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়নি; বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর সাধারণ ক্রেতাদের প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। এতে করে শুধু মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। যারা মূলত হিমাগারে আলু মজুত করে তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অসংখ্য খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষক মনে করেন, বাজারের অস্থিরতা কমাতে হিমাগারে অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি। 

আলু ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন বলেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্থানীয় আড়তদাররা মনে করেন, হিমাগারের গেটে সিন্ডিকেটের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নিলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আলুর দাম সহনশীল রাখা সম্ভব হবে। এছাড়া সরকারিভাবে যদি কৃষকদের মজুত সুবিধা দেয়া হয়; তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার সুযোগ কমবে; আর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের প্রকৃত মূল্য পাবে।

 ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলু দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। এর আগেও আলুর মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছিল। তখনো বলা হয়েছিল, হিমাগার ও মজুতদারদের কারসাজিতে বাজারে এ অস্বাভাবিক দাম। এবারও একই কথা বলা হচ্ছে। দেশে এ বছর চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। বাড়তি আলুও আছে ব্যবসায়ীদের কাছে। তারপরও আলুর কেজি ৮৫ টাকা; দাম আরও বাড়বে পারে। তারা বলছে, ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান। খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। 

তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। এছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এই ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তারপরেও আলুর দাম কমছে না। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]