অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী মতলব উত্তর উপজেলার সারাদেশের ন্যায় ছেংগারচর পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা করেছে।
বিদ্যমান অবস্থায় মানুষ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্বের সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ দিনের মাথায় ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়। এ সরকারের প্রায় দুই মাস হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শুধু মেয়রের স্থলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিল্লোল চাকমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে রুটিন কার্যক্রম সচল রেখেছে। তবে কাউন্সিলর শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না। ১৩ জনপ্রতিনিধির বদলে এক সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এজন্য কাউন্সিলরদের পুনবর্হাল করা বা রাজনীতিক বা সমাজের বিশিষ্টজনদের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নিয়োগ করে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করলে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের এ শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না।
এদিকে সব কাউন্সিলরকে একসঙ্গে বরখাস্ত করায় আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য দল থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এছাড়া নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জনপ্রতিনিধি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্ম–মৃত্যু নিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজসহ স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
ছেংগারচর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ হারিছ খান বলেন, প্রতিদিনই বহু মানুষ নাগরিক সেবাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমার কাছে আসছেন। সরকারের হঠাৎ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে নেওয়া সঠিক হয়নি। একইভাবে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ছেংগারচর পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ শাহজাহান মোল্লা ৫নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ সরকার ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আকলিমা বেগম।
হারুন সরকার জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলররা কোনো অপরাধ না করলেও বরখাস্ত করে দেওয়া সরকারের উচিত হয়নি। অনেক কষ্ট করে একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তাছাড়া কাউন্সিলর শূন্য করায় নাগরিক সেবাও ভেঙে পড়েছে।
মোখলেছুর রহমান জানান, জনগণ সেবা পাওয়ার জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন যে কাঠামো তৈরি করছে, তাতেও মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে না।
ডেঙ্গুর ভিটি গ্ৰামে শাহ আলম বলেন, আমার জমি নামজারি ও জমা ভাগ (খারিজ) করার জন্য দ্বৈত প্রত্যায়ন পত্রের প্রয়োজন। দ্বৈত প্রত্যায়ন পত্রের জন্য দিনের পর দিন ঘুরছি। কাউন্সিলর না থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছি। এখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পৌরসভা। এ কাজে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা পরিষদে ঘুরছেন। প্রতিদিন যাতায়াতে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।
পাচগাছিয়া গ্ৰামের ইউসুফ জানান, তার ছেলে ও মেয়ে জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষরে জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে একাধিকবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ও এ্যাসিল্যান্ডের স্বাক্ষর নিয়ে পারিনি। আজ প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে বসে অপেক্ষা করছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, তাদের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও আমাদের সময় দেন না। উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে এসেও সেবা না পেয়ে চলে যান তারা।
এ বিষয়ে পৌরসভার জন্মনিবন্ধনের দায়িত্বর মাহবুব সরকার বলেন, জনপ্রতিনিধি না থাকলে একটু জটিলতা হবেই। তবে পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিল্লোল চাকমা। জরুরী প্রয়োজনে ভূমি অফিসে গিয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করে পৌরসভার কার্যক্রম চলমান রাখছি। সবধরনের কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জন্মনিবন্ধন বিষয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে।
প্রশাসক হিল্লোল চাকমা বলেন, এই পৌরসভার সেবা নিশ্চিত করা ও যাতে জনসাধারণকে সেবা নিতে এসে ভোগান্তি না হয়। সেটি মাথায় রেখেই স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে দায়িত্ব পালন করছি।