সপ্তাহ দুই আগে জ্বরে আক্রান্ত হন শরিফুল ইসলাম। ৩-৪ দিন জ্বরে ভোগার পর পরিস্থিতি একটু উন্নতির দিকে যেতে না যেতেই জ্বরে আক্রান্ত হয় তার ৬ বছর বয়সী মেয়ে হুমায়রা। ঠিক তার দু’দিনের মাথায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন শরিফুল ইসলামের স্ত্রী এবং মা। অর্থাৎ ঘরের সব সদস্যই এখন জ্বরে আক্রান্ত। এদের প্রায় সবারই মাথাব্যথা, সর্দিকাশি, বমি হওয়া, গলা ব্যথা, চোখ লাল হওয়া ও পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ রয়েছে। কিছু খেতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আতঙ্কে একে একে সবারই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ। তবে কারো জ্বর ১০০ ডিগ্রির নিচে নামছে না। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তাদেরকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দিকাশি, বমি হওয়া, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া, চোখ লাল হওয়া ও পেটে ব্যথার মতো উপসর্গ। এতে ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য ভিড় করছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগই মৌসুমি জ্বর।
গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রয়েছে রোগীর স্বজনদের দীর্ঘ লাইন। ক্লান্তিতে অনেককে মেঝেতে বসে রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগেরই জ্বর, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বার ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে জ্বর নিয়ে আসা রোগীর ভিড় চোখে পড়েছে ব্যাপক। রাজধানীর ধানমণ্ডি ইবনে সিনা ও কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ অপেক্ষায় রয়েছে রোগী ও স্বজনরা। একই চিত্র দেখা গেছে ধানমণ্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক ও আনোয়ার খান মডার্ন ডায়াগনস্টিকে।
রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে পরীক্ষা করাতে আসছেন তারা। ডেঙ্গু তুলনামূলক বেশি প্রাণঘাতী ভেবে তারা কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে নারাজ।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তিন থেকে সাত দিন জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে। পরীক্ষায় কিছু মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্যও জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কথা বলছেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ মনোয়ার আলী বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগী অনেক বেড়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ৮০০ রোগীর মধ্যে ৩০০-এর বেশি জ্বর নিয়ে এসেছে। প্রতি চারজনে একজনের ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। যাদের নেগেটিভ আসছে, উপসর্গ বুঝে চিকিৎসা-ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালের সহকারি পরিচালক মফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। এই সময় ভাইরাল ফিভার অনেক বেশি থাকে। এর সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। জ্বর হলেই আতঙ্ক কাজ করছে ডেঙ্গু কি না। তাই তারা বাসায় না থেকে হাসপাতালে আসছে। তিনি বলেন, জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী আসছে। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ জন প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। এসব রোগীর বেশির ভাগের জ্বর। পরীক্ষায় প্রতি চারজনে একজনের বেশি ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। দুপুরে রোগীর এত চাপ থাকে যে সামাল দেওয়া যায় না। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। শুধুমাত্রা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এবছরের শুরু থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯৭ জন এবং আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬১ হাজার ৮১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৭ হাজার ৪৭৬ জন।