প্রকাশ: বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:০২ পিএম (ভিজিটর : ২৪৭)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের( ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে বেশকিছু ধরেই রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার(৩০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই এরিয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ধরে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে রাজধানীর অন্যান্য সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পুরো ঢাকা শহরের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ জনগণ। এর আগে সকাল ৯ টা থেকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্যান্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থার পাওয়া শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এ সব দাবি-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছুক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী দাবিও আছে। একটি বৈষম্য বিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। শিক্ষা খাতের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবিপূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া কঠিন। অথচ সব কয়টি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে; সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।
এতে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ঐ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন।’
এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। দেশের সমস্যাসঙ্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসেবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সব সহানুভূতি আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখা হবে।
উল্লেখ্য, ঢাবির অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ হলো, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।