একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান তথা সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দু’মাস ২৪ দিন পর অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের সড়কে যাত্রা শুরু করেছে। তবে এই যাত্রাপথ সড়কে না-কি মহাসড়কের দীর্ঘ পথপরিক্রমা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ এখন পর্যন্ত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। তার আগে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে এই সার্চ কমিটি গঠন করা হলো বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যে তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। তিনি সার্চ কমিটি গঠনের তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে নিয়ে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করতে প্রধান উপদেষ্টার সুপারিশের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটিতে সুপারিশ পাওয়া হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে রাতেই অথবা আজ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। ২০২২ সালের ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ এর ৩ ধারার বিধান অনুযায়ী এই কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আইনের অন্যান্য বিধান অনুযায়ী পদাধিকার বলে কমিটিতে আছেন মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আইনের নির্দেশ অনুযায়ী যাদের একজন থাকছেন নারী।
এই কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের সুপারিশ পাঠাতে হবে। আইনের ৪(১) ধারার বিধান হচ্ছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে একই আইনে নির্ধারণ করে রাখা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সার্চ কমিটির। এজন্য তারা রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য যাদের সুপারিশ করা হবে তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে প্রতিটি পদের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ২ জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি প্রতিটি পদের জন্য সুপারিশকরা দু’জনের মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেবেন।
যদিও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল বিকেলেই সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এবার অসাধারণ একটা নির্বাচন হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন গঠনের পর কমিশনের প্রথম কাজ হবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। যদিও ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী প্রতিবছর ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয় তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে হালনাগাদ করা নির্বাচন কমিশনের রুটিন কাজ। অতীতে এই তালিকা হালনাগাদ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা উঠেছে। এবার সেসব সমালোচনামুক্ত ভোটার তালিকা করা হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
এরপর নির্বাচন কমিশনকে অপেক্ষায় থাকতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায়। সাংবিধানিক সরকারের শাসন বহাল থাকলে এই নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে নির্বোচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের কার্যক্রম শুরু করতে পারতো। তবে এখন তাদের নির্বাচনী রোডম্যাপের জন্য প্রতীক্ষায় থাকতে হবে।
যার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যে। তিনি সার্চকমিটি গঠনের বিষয়ে তথ্য প্রকাশের সময়েও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেত্রী অন্যদেশে বসে সন্ত্রাসী হুমকি দিচ্ছে। গণহত্যা চালানোর পর অনুশোচনা ও বিচারের আগে এ দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত কিনা এটা মানুষ বিবেচনা করবে।’ তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। এসব সংস্কারের জন্য নির্বাচনী কার্যক্রমে পৌঁছাতে কতটা সময় প্রয়োজন হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।