প্রকাশ: সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:১৮ পিএম (ভিজিটর : ২২২)
ফ্যাসিজমের মাধ্যমে যারা রাজনীতি করবে তাদের জায়গা বাংলাদেশ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, অন্যের মত ও মানবতাকে যারা শ্রদ্ধা করবে তারাই বাংলাদেশে রাজনীতি করবে। সোমবার রাজধানীর রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লগি-বৈঠার নৃশংসতার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা কোনো অন্যায়ের কাছে আপস করব না। কোনো লুটের মালে ভাগ বসাব না। দেশের মানুষের খেদমতের সুযোগ পেলে মালিক হব না সেবক হবো। মানুষের জানমাল আবরুর রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী হবে চৌকিদার, পাহারাদার।
আপাতত দৃশ্যত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্টের দোসররা তাদের কর্মের উপহার পেয়েছেন গত ৫ আগস্ট মন্তব্য করে জামায়াত আমির আরো বলেন, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তার সঙ্গীরা পালানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ চুরি করে পালিয়েছেন, কেউ বা ধরা পড়েছেন। যারা পালিয়েছেন বা ধরা পড়েছেন মানুষ হিসেবে তাদের এরচেয়ে মৃত্যুই ছিল শ্রেয়। কারণ কোনো রাজনীতিবিদের জন্য পালানো মানায় না। রাজনীতি করবেন রাজকীয় মন নিয়ে, রাজনীতি করবেন পুরো জাতির জন্য। যদি সেটাই করেন তাহলে পালাতে হবে কেন?
জেনেশুনে যারা অন্যায় করে তা অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে পালায়, চোর পালায়, ডাকাত পালায়, লুটেরা, গুমকারী, ধর্ষক পালায়। কোনো ভালো মানুষ পালায় না। বিচারের রায় তো তারাই পালিয়ে দিয়েছেন। এখন বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার হয়ত বিচার শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু শুরুটা করতে হবে। আর এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে। যেদিন লগি বৈঠার তাণ্ডবে দেশ, রাজনীতি, সমাজ তার পথ হারিয়েছিল। মানবতার মৃত্যু হয়েছিল। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার করতে হবে।
১৯৯৬ সালে হাতজোর করে অতীতের দলীয় অপরাধের জন্য মাফ চেয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একটা মিথ জারি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা যা বলে তা করে না, যা করে তা বলে না।’ তারা কিন্তু এবার না বলেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জাতির ওপরে জেদ মেটাতে গিয়ে নিরস্ত্র মানুষকে খুন করে পেট্রোল ঢেলে আগুনে ছাই করে দিয়েছে। আবার অনেকে বলে আওয়ামী লীগ নাকি রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। যারা গোটা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? ভোট চাইবার, ভোটের ময়দানে ফিরে আসার মতো নৈতিক অধিকার তাদের নেই। যদি জনগণের ভোটেই তাদের আস্থা বিশ্বাস থাকত তাহলে গত তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতো। তারা তো সেটা চায়নি। তারা চেয়েছে মেরে কুটে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য তারা মানুষকে মেরে কেটে পুড়িয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করেছে। অথচ যাকে ইচ্ছে ক্ষমতা দেন আবার যাকে ইচ্ছে ক্ষমতা কেড়ে নেন। তারা হয়ত সেটা কল্পনা করেনি, আমরাও করিনি। আমাদের দেশবাসীর স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশের জন্য আমরা যুব সমাজকে যাচাই করে নিতে চাই। যুব সমাজের ওপরে আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। যারা দায়িত্ব নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছে তারা আমাদের আগামীর বাংলাদেশও গড়ে দিতে পারবে। আমরা তারুণ্য নির্ভর, ইনসাফভিত্তিক সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মাণে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতের সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে তুলে ধরুন। আমার মধ্যে কালিমা থাকলে আমাকেও ছাড় দেবেন না। জাতির বিবেক দর্পণ হিসেবে সব ক্ষেত্রে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার আহ্বান জানান তিনি।