রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতেই হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই ইস্যুতে তারা রাজনৈতিক ঐক্যমত তৈরি করার চেষ্টা করছে। সিরিজ বৈঠক করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির নেতাদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। এর আগে বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ , ১২ দলীয় জোট ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির অপসারন ইস্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ পার্টি- এবি পার্টির নেতারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে ঐক্যমত পোষন করলেও ভিন্ন মত পোষন করেছেন বিএনপি। বিএনপির নেতারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের জানিয়েছেন, তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের মতামত জানাবে। তবে দলটির নেতারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারনের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করছেন। অপরদিকে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারনের পক্ষে মত দিয়েছেন ১২ দলীয় জোট। আর সংলাপ শেষে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারন চায় গণঅধিকার পরিষদ।
আজ দুপুরে রাজধানীর আজিমপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা বিষয়ক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অর্ন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছেন, সেখানে অনেকের বিচার হবে। কিন্তু আমরা যদি কাজের বদলে অকাজে বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ি, রাজনৈতিক শূন্যতা, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করি- তাহলে তো জনগণ কথা বলা শুরু করবে। শুধু জটিলতার পর জটিলতা তৈরি করছেন কেন- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দোসর তো আরও অনেকেই আছে আপনাদের মধ্যে, কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না। শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন।
এর আগে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুতে সরকারকে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয় এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শেরে-বাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তবে স্পষ্ট মিথ্যাচার করে নিজের যোগ্যতা হারিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, এমন মন্তব্য করেছেন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। আজ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদ উত্তর বাংলাদেশে সংবিধান প্রশ্ন: মুজিববাদ নাকি জনমুক্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। জামায়াতের প্রচার সম্পাদক বলেন, একজন রাষ্ট্রপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে সেদিনই তিনি পদ হারিয়েছেন। জামায়াতের কথা স্পষ্ট মিথ্যাচার করে নিজের যোগ্যতা হারিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি অবৈধ। তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আজ সোমবার দুপুরে বিজয় নগরে এবি পার্টি কার্যালয়ে এবি পার্টির সাথে সংলাপে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সঙ্গে আমাদের আজকের আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা আশা করছি এই আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
জাতীয় পার্টি (জাফর) সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ এস এম শামীম বলেছেন, রাজনৈতিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারন চায় ১২ দলীয় ঐক্যজোট। এই ব্যাপারে তাদের দলগত অবস্থান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের তারা জানিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন শামীম।
রোববার রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে ১২ দলীয় জোটের সাথে বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবশ্যই চলে যেতে হবে। এই সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে জাতীয় অস্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। তাই তাকে তার পদ ছেড়ে যেতেই হবে। এ নিয়ে সবগুলো রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য রয়েছে। তবে কী প্রক্রিয়ায় এই অপসারণ হবে, তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।