প্রকাশ: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:০৬ এএম আপডেট: ৩১.১০.২০২৪ ৫:২২ পিএম (ভিজিটর : ২৩০)
বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের ভোক্তারা এমন অনেক পণ্য কিনে থাকেন যার দাম বিশ্বে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রব্যমূল্যের বিষয়টা ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। বিষয়টা নিয়ে সকল মহলই কম-বেশি চিন্তিত। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এ ব্যাপারে একটা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা গেছে শুধুমাত্র হাত বদলের কারণে একটা পণ্যের দাম ৯ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের গবেষণায় নিত্যপণ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, সরবরাহ ঘাটতি, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা, উচ্চ পরিবহন ব্যয়, বাজারের অধিপত্য, সীমিত দর কষাকষির ক্ষমতা দায়ী বলে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ একটা গরিব দেশ, এখানকার অধিবাসীরা নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করে। সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ অতি দরিদ্র জনসংখ্যা হচ্ছে ৪ কোটি ১৭ লাখ, যার মধ্যে ৬ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ। এরকম দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরেই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো আশ্বাস দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসেনি। কিন্তু তারা কাজ করছে। ইতোমধ্যে স্ফীতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি আড়তে আনতে পারলে খাদ্যপণ্যের দাম অনেকটা কমানো সম্ভব। ডিমের ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব হলে অন্যান্য ক্ষেত্রে কেন হবে না! সেই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ডিসিসিআই বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদন খরচের সাথে খুচরা পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে দেখা যচ্ছে, এক কেজি হলুদ উৎপাদন করতে কৃষকের ব্যয় ৩৪ টাকা ৭৬ পয়সা এর গড় খুচরা বিক্রয় মূল্য হচ্ছে ৩২৩ টাকা ৩৮ পয়সা অর্থাৎ বৃদ্ধি হলো ৮৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ, একইভাবে কাঁচামরিচের উৎপাদন ব্যয় ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা, বিক্রয় ২৩৬ টাকা ২৫ পয়সা মূল্য বৃদ্ধি হলো ২৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। শুকনা মরিচ উৎপাদন ৭৫ টাকা ৮০ পয়সা, খুচরা বিক্রয় ৩২১ টাকা, মূল্যবৃদ্ধি ৩২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আদার প্রতি কেজি উৎপাদন ব্যয় ৬৪ টাকা ১৬ পয়সা, খুচরা বিক্রি ২৫৭ টাকা ৫০ পয়সা, মূল্যবৃদ্ধি ৩০১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোটা চালের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ১৬ টাকা ২২ পয়সা, খুচরা বিক্রয় ৫১ টাকা ১৩ পয়সা, মূল্য বৃদ্ধি ২১৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরকম অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রেই হাত বদলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য আড়তে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ডিমের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কাজটা খুব কঠিন নয়, শুধুমাত্র সক্রিয় উদ্যোগ দরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত জেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশে ও শ্রীলঙ্কার মতো খাদ্যে মূল্যস্ফীতি দশমিক শূন্য ৫-এ নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।