ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ● ১৭ জুন ২০২৫ ৩ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার মঙ্গলবার ● ১৭ জুন ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




সচল রাখতে হবে অর্থনীতির চাকা
ইয়াহিয়া নয়ন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৩:৩৯ পিএম আপডেট: ২২.১০.২০২৪ ৩:৫৬ পিএম  (ভিজিটর : ২২৫)
দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছেনা। মাসজুড়ে শিল্প এলাকায় অস্থিরতা, প্রতিহিংসায় একাধিক শিল্পকারখানা জ্বালিয়ে দেয়া, দেশের জন্য দীর্ঘ দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিল্পকারখানা জ্বালিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার করে দেয়া হয়েছে। ওইসব শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বড় ব্যবসায়ীদের নামে নানা রকম মামলা, ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করে, বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রেফতার করে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটা আতংক তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এসব কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

‘বাংলাদেশ’স লস মে বিকাম ইনডিয়া’স গেইন (বাংলাদেশের ক্ষতিতে হতে পারে ভারতের লাভ)’, সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন শুরু হয় এই লাইনটি দিয়েই। ভারতের বাণিজ্য বিষয়ক গণমাধ্যম ’দি সেক্রেটারিয়েট’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লেখিকা মহুয়া ভেঙ্কটেশ এই প্রতিবেদনে মূলত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং এই অস্থিরতার ফায়দা ভারত কীভাবে তুলতে পারে- সেই বিষয়টি।

এরই মধ্যে আমাদের দেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। এই তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার শুরু হয় মূলত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই। যারা ধারাবাহিকতা চলে বাংলাদেশে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পর পর্যন্ত। আর বাংলাদেশের এই অস্থির সময়ের ফায়দা লুটেছে প্রতিবেশী ভারত। 

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পোশাক খাত বর্তমানে ‘স্থিতিশীল’। তবে ভারতের তৈরি পোশাক খাত এই সময়ে যথেষ্ট এগিয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের আগের বছরের তুলনায় ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। 

বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা আছে। ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। লিভাইস, জারা এবং এইচঅ্যান্ডএমসহ বিশ্বের অনেক শীর্ষ ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কিনে থাকে। 

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, মূল্যস্ফীতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত থাকার পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ফায়দা তুলেছে ভারতের তৈরি পোশাক শিল্প। ভারতের অ্যাপারেলস এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (এইপিসি) চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে উচ্চ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। যেখানে প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি লক্ষ্য করেছে।

দেশের সচেতন মানুষ সব সময় ন্যায়বিচার ও প্রকৃত অপরাধীর শাস্তির পক্ষে। যদি কোনো ব্যবসায়ী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করেন, তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু ব্যবসা সচল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক নয় যে সব ব্যবসায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিবাজ- এটাও ঠিক নয়। আমরা বিষয়গুলো সাধারণীকরণ করছি, যা আমাদের ইমেজ সংকটে ফেলেছে।

রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, একজন উদ্যোক্তাকে রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবসায়ী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যদি একজন ব্যবসায়ীকে রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এটি তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে পারে, যেখানে কয়েকশ বা হাজার হাজার লোক কাজ করে। ব্যবসায়ীরা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত আস্থা না পায় এবং কারখানা চালাতে না পারে তাহলে তা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমনকি নতুন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে।

এখন সরকারকে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। কারণ আতঙ্কে থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে যাবে না। অর্ন্তর্বতী সরকারকে একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে তারা কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেবেন। সময়ের প্রয়োজনেই এই বার্তা  জরুরি।

গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন তাদের রাজনীতি নয়, ব্যবসায়ী পরিচয় মূল্যায়ন করা উচিত। বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব বলেছেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, একজন উদ্যোক্তাকে রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবসায়ী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যদি একজন ব্যবসায়ীকে রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এটি তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে পারে, যেখানে কয়েকশ বা হাজার হাজার লোক কাজ করে।’

সময়ের প্রয়োজনে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়, যা সংস্থার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি তারা দোষী প্রমাণিত হয় তবে সংস্থা এবং জীবনধারণের জন্য নির্ভরশীল ব্যক্তিদের ক্ষতি না করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।  

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমন একজনকেও আমাদের রেহাই দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু একটি যুক্তি আছে যে আমাদের সেই লোকদের ব্যবসা বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ এটি অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষতি করবে।

ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সরকারকে ব্যবসায়িক পরিবেশে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারকে সুস্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে, তারা রাজনৈতিক বিবেচনা করবে না বরং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হলে তা অন্যদের অন্যায় কাজে উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজদের দমন ও ভালো ব্যবসায়ীদের পুরস্কৃত করার এখনই সময়। সবার আগে আমাদের দেশ, দেশের স্বার্থ। তারপর অন্যকথা। 

লেখক : সাংবাদিক।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]