প্রকাশ: শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:০৮ পিএম (ভিজিটর : ৩৩৫)
মানুষ পণ্য কিনতে গিয়ে মেজাজ হারান। পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ঠিকই কিন্তু নিত্যপণ্যমূল্যে সিন্ডিকেটের হোতাদের সঙ্গে নেননি। ফলে তার রেখে যাওয়া সিন্ডিকেট চক্র সাধারণ ক্রেতাদের কষ্ট দিচ্ছে। অতিদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষদের পকেট কাটছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা সিন্ডিকেট ভেঙে চূরমার করে দেওয়ার কথা বলছেন, ভোক্তারাও তাই চাচ্ছেন, কিন্তু কাজটি কে করবে?
নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি সেই উদ্যোগ নিবেন, নাকি তারা ভয় পাচ্ছেন। জনগণের প্রশ্ন হচ্ছে, গত সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে সিরিয়াস ছিলো না, কারণ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা ওই সরকারের কাছের লোক ছিলো বলে, কিন্তু বর্তমান সরকারের তো নেই সমস্যা নেই, কোনো সিন্ডিকেট চক্র তো আর এই সরকারের কাছের লোক নয়, ফলে সরকার কঠোর হলে সিন্ডিকেট জিরোতে নিয়ে আসা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকার দু’টি কাজ করতে পারে, একটি হচ্ছে- অভিযান পরিচালনায় পর্যাপ্ত জনবল নেই, এ কারণে বিভিন্ন দফতর থেকে (অনেক দফতরেই কর্মকর্তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন) সাময়িক সময়ের জন্য জনবল নিয়ে এসে সারাদেশে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত- মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যদেও সহায়ক হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে হবে কঠোর মনোভাব, অর্থ্যাৎ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম একেবারে আকাশছোঁয়া। তেলের দাম বেড়েছে। আমদানির কোনো প্রভাব পড়েনি পেঁয়াজের দামে। মাছ গোশতের দাম তো অনেক বেশি। গরিবের পুষ্টি ডিমও এখন গরিবের আয়ত্তের বাইরে। কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। বাজার একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বর্তমান সময়ে মানুষের যেসব দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নিম্ন আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও এখনো বাজার অস্থির। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য বাজার করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ডিম, ভোজ্য তেল ও চিনির শুল্ক-কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনার জন্য দেশের সব জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, বৃহৎ আড়ত, গোডাউন বা কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্য স্থানগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবে টাস্কফোর্স। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অভিযান চালানোর প্রয়োজন আছে। একই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও তা মেনে চলতে বাধ্য করা। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বাজার অস্থির হয় মূলত ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সিন্ডিকেট ও মজুদদারির কারণে। তাঁদের অতিমাত্রায় লোভের বলি হয় সাধারণ ভোক্তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই মনে করে, অনাবশ্যক হাতবদল কমিয়ে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত বছরের জুলাইয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)। সেখানে ক্যাব নেতারা বলেছিলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে দেশের গুটিকয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে তারা। আর এসব দেখভালের দায়িত্ব যেসব সরকারি সংস্থার, তাদের সক্ষমতা সীমিত। তাই জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নজির নেই। তবে কারা এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নাম বলেনি সংগঠনটি। কারা সিন্ডিকেট করছে সে সম্পর্কে সরকারের গোপনীয় সংস্থাগুলোর কাছে নিশ্চিয়ই তথ্য রয়েছে। যদি না থাকে তাহলে ক্যাবসহ নিত্যপণ্যমূল্য ও ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া যেতে পারে। মানুষ চায় বাজার সিন্ডিকেটের নয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। স্বস্তিতে থাকুক সাধারণ মানুষ।
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট