প্রকাশ: শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:০২ পিএম (ভিজিটর : ২৭২)
বিদ্যমান সংসদীয় আসন পদ্ধতির পরিবর্তে ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্বশীল পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধী। ফলে আনুপাতিক ভোটের নির্বাচন পদ্ধতিতে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে বিএনপি -জামায়াত। বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধী করে বক্তব্য দিচ্ছেন। দলটির নেতারা বলছেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে জটিলতা বাড়বে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে নির্বাচন মানে স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ দেওয়া বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির এক সিনিয়র নেতা। তবে জামায়াতের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সভা সমাবেশে ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্বশীল পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের যোক্তিকতা তুলে ধরছেন।
গত ৯ আগষ্ট রাষ্ট্র সংস্কারে ১০ দফায় ৮১টি প্রস্তাবনা দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি বিদ্যমান সংসদীয় আসন পদ্ধতির পরিবর্তে ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্বশীল পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তাব করে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবে দলটি বলেছে, সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে। ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করতে হবে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে করতে হবে।
তবে জামায়াতের এই দাবির বিরোধীতা করছে বিএনপি। দলটির নেতারা আনুপাতিক ভোটের নির্বাচনকে সামনে এনে জটিলতা তৈরি না করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, হঠাৎ আনুপাতিক ভোটের নির্বাচনকে সামনে এনে জটিলতা তৈরি করা উচিত হবে না। এ জটিলতা তৈরি মানে, স্বাধীনতা বিরোধীদের মদদ দেওয়া। পৃথিবীর অনেক দেশ এ পদ্ধতি চালু করে ফিরে এসেছে। নেপাল চালু করেছিল, এলোমেলো হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, একটা নতুন পদ্ধতি তৈরি করতে হলে সমাজ এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার মিল থাকতে হবে। সুশীল সমাজ এটার ওপর বক্তব্য রাখছেন, আর এটার ওপর ভিত্তি করে আপনারা যদি মনে করেন এটা সঠিক, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থা আরও ভেঙে যাবে। এখন এই আনুপাতিক পদ্ধতিটা বুঝতেই চলে যাবে ৫ থেকে ১০ বছর।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে ব্যাপারে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মসজিলও ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্বশীল পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জোরালো অবস্থানে রয়েছে। এই সকল দল অনেক আগে থেকেই এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠনিক ভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা উপস্থাপনের সময় এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। এর পর পরই আবারো দেশের রাজনীতিতে আলোচনায় আনে ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচনের পদ্ধতি। সরকার সমর্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এই পদ্ধতিতে ভোটের যোক্তিকতা তুলে ধরছেন।
উল্লেখ্য এই পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে ভোটারা দলের প্রতিকে ভোট দেবেন। যে দল ভোটের যত শতাংশ ভোট পাবেন সে অনুযায়ি এমপি নির্বাচিত হবেন। ভোটের পরই দল থেকে এমপিদের নাম দেওয়া হবে। পৃথিবীর প্রায় অর্ধশতাধিক দেশে বর্তমানে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনী ব্যাবস্থা প্রচলিত রয়েছে বলে জানা গেছে।