ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বুধবার ● ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
ই-পেপার বুধবার ● ১৫ অক্টোবর ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক; খুলছে ‘অংশীদারত্ব’ সম্ভাবনার দরজা
নাজিউর রহমান সোহেল
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪, ১১:৩৩ এএম  (ভিজিটর : ৫১৫)
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতে বহু মানুষের হতাহতের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা করেছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এরপরই গত ৩১ জুলাই জোটের পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নতুন অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে দেয় ইইউ। পরবর্তীতে গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার আলোচনার পথ সুগম হয়। এই মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণে সব উপাদানকে একটি কাঠামোয় আনতে চায় দুদেশ। আশা করা হচ্ছেÑ সবকিছু ঠিক থাকলে ওই অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) আগামী নভেম্বর মাসে আলোচনা শুরু হতে পারে। এর মাধ্যমে দুই পক্ষের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শান্তি ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ে কাঠামো তৈরি করা হবে। পাশাপাশি এবারের আলোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধার বিষয়টিও প্রাধান্য পেতে পারে বলে ধারণা করছেন কূনীতিকেরা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পালা পামপালোনির নেতৃত্বে আগামী ৩ নভেম্বর ইইউর একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। আর ৪ নভেম্বর ঢাকায় দুই পক্ষের মধ্যে যৌথ কমিশনের বৈঠক এবং ৫ নভেম্বর চুক্তির খসড়া নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে। 
কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার এই আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপের ২৭ দেশের জোটের সঙ্গে পিসিএ চুক্তি হলে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুলবে অভাবনীয় সম্ভাবনার দরজা। পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ইইউ ২০০১ সালে সহযোগিতা চুক্তি করে। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই কাঠামোর পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন অর্থাৎ একটি সামগ্রিক পরিবর্তন প্রয়োজন। ইইউ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ। ফলে অংশীদারত্বের মাত্রাও আগের থেকে বেশি। এখন থেকে ইইউ’র সঙ্গে নতুন অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি করা উচিত যেখানে সম্পর্কের সবগুলো উপাদান সংযুক্ত থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে আরেক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এটি অনেক বড় ডকুমেন্ট এবং এর সঙ্গে সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও এজেন্সি জড়িত এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আশা করা হচ্ছে- আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ইইউ-বাংলাদেশ এই আলোচনা ফলপ্রসুর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও তুরস্কের আঙ্কারা ইলদিরিম বেয়াজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম ভোরের ডাককে বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এজন্য বাংলাদেশ বহু আগ থেকেই ইইউর সঙ্গে পিসিএ চুক্তি করতে ব্যাপক আগ্রহী ছিল। এই চুক্তি সফলভাবে স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে। বিশেষ করে বাণিজ্যের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ শুল্কছাড় পাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইইউ। গত বছর বাংলাদেশ ২৫০০ কোটি ডলারের পণ্য ইইউতে রপ্তানি করেছিল। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ প্রকল্প সহায়তার জন্য প্রায় ১০০ কোটি ইউরো ঋণ নিয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ অত্যন্ত নিবিড়। ইইউভুক্ত প্রায় ১০টি দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রায় ইইউভুক্ত ১০টি দেশে দূতাবাস আছে। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে বাংলাদেশ ও ইইউ সহযোগিতা চুক্তির তিনটি ভিত্তি ছিল। সেগুলো হচ্ছে বাণিজ্য, মানবাধিকার ও উন্নয়ন। বর্তমান অংশীদারত্ব চুক্তির উপাদানে ওই তিনটি ছাড়াও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা, ডিজিটাল সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো রযেছে। উন্নয়নশীল অনেকগুলো দেশের সঙ্গে পিসিএ রয়েছে ইইউ-এর। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম পিসিএ নিয়ে আলোচনা করছে ইইউ। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান আলোচক (চিফ নেগোশিয়েটর) পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে ইইউ এর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামপোলিনি। আসছে নভেম্বরেও তারাই নেতৃত্ব দেবেন। 

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তিতে যা আছে
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে সহযোগিতা চুক্তিতে অনুচ্ছেদ ছিল ২১। অন্যদিকে খসড়া অংশীদারত্ব চুক্তিতে অনুচ্ছেদ আছে ৮৩টি। আকারে ও বিষয়বস্তুতে এটি অনেক বড় এবং প্রচুর উপাদান এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। মোটা দাগে যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তা; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা; বাণিজ্য ও বিনিয়োগ; স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সুবিচার; এবং অন্যান্য খাতে সহযোগিতা। শান্তি ও নিরাপত্তা উপাদানের মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো হচ্ছে ডিসআর্মামেন্ট, ছোট অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসবাদ দমনসহ অন্যান্য বিষয়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আসিয়ানসহ অন্যান্য ফোরামে দুই পক্ষের অবস্থান ও স্বার্থ নিয়েও আলোচনা হবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপাদানে স্যানেটারি ও ফাইটোস্যানেটারি, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা, কাস্টমস সহযোগিতা, অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ত, সেবা ও ডিজিটাল ট্রেডসহ অন্যান্য বিষয় থাকবে। স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সুবিচার উপাদানের বিষয়বস্তু অনেক বড় এবং অনেকগুলো ছোট ছোট উপাদান এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ সমতা, নারী ক্ষমতায়ন, পারসোনাল ডাটার সুরক্ষা, বিচার বিভাগ ও আইনি সহযোগিতা, কনসুল্যার সুরক্ষা, অভিবাসন, মানবিক সহযোগিতা, অর্গানাইজড অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন প্রতিরোধ, ওষুধ নীতি সহযোগিতাসহ অন্যান্য উপাদান। এর বাইরে অন্যান্য খাতে সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে আর্থিক খাতে সহযোগিতা, কর বিভাগে সুশাসন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা, আইসিটি, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, লজিস্টিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কৃষি সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয় উল্লেখযোগ্য।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা সফর করেন। ওই সফরে পামপালোনি পররাষ্ট্র-বাণিজ্য ও শ্রম সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও ইইউর বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধার পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ইইউকে জানিয়েছিল, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর যদি তৈরি পোশাক খাতের পণ্য তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকে তবে তা হবে অর্থহীন। তৈরি পোশাক খাতকেও শুল্কমুক্ত সুবিধার মধ্যে (জিএসপি প্লাস) যুক্ত করতে হবে। এর বাইরে শ্রম ইস্যুতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার যে নয়টি টার্গেট আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তখন ইইউকে ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কর্মপরিকল্পনার প্রায় ৮০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। ইইউ প্রতিনিধিদল ইইউ লেবার ল’ ডেপ্লয়মেন্ট প্রসঙ্গ তোলে। ঢাকার পক্ষ থেকে ইইউকে জানানো হয়েছিল, এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ করে বাংলাদেশ-ইইউ। ওই সংলাপে ইইউর পক্ষে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এবারের আলোচনা আরও বেশি ফলপ্রসু হতে পারে বলে ধারণা করছেন কূনীতিকেরা।





আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : bhorerdakonline@gmail.com, adbhorerdak@gmail.com