চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল করার চিন্তা করা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি এবং সাম্প্রতিক বন্যায় উৎপাদন ঘাটতির কারণে এ চিন্তা চলছে। ইতোমধ্যেই চালের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক, ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর, ১ শতাংশ বীমা, ১ শতাংশ ল্যান্ডিং চার্জ এবং ০.৫ শতাংশ ডিএফ ভ্যাট মিলিয়ে মোট ৬২.৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য্য আছে।
গত দু’মাসে বাজারে চালের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ার জন্য দেশের বন্যা পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এক মাস আগে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার অধিকাংশ কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে ধানের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ধান-চাল উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর, শেরপুর, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ বন্যা কবলিত। স্বাভাবিক ভাবেই দেশে আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আশঙ্কাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের বাজার কারসাজি শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির প্রথম দিকেই বানিজ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানির মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল করার তাগিদ দিয়েছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের উদ্যোগ জানতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আমদানি করে ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা না করা হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দাম এবং উচ্চশুল্ক হারের কারণে চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী নয়। এজন্য চাল আমদানির অনুমতি দিয়ে অতীতে তেমন একটা সুফল পাওয়া য়ায়নি। যেজন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব লুৎফর রহমান এনবিআরকে চিঠি দিয়েছেন। এতে চালের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি-বেসরকারি আমদানিতে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ও সুগন্ধিবিহীন আতপ চালের ওপর শুল্ক কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।
এই চিঠিতে বলা হয়েছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উৎসাহিত করতে চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ ৭ লাখ টন চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৯৬,৯৭০ টন এবং চাল ১,২৫৫,৪৯৭ টন। বর্তমানে, সরকারের মজুদ রয়েছে ১২,৬৪,৭৪০ টন চাল এবং ৪,৬৩,৯২৮ টন গম, মোট ১,৭৫৪,১৯৯ টন খাদ্যশস্য।
১৪টি জেলায় সাম্প্রতিক বন্যা আউশ, আমন চারা এবং আমন বীজতলার মারাত্মক ক্ষতি করেছে। চালের চাহিদা, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম আরও বেশি হতে পারে। উপরন্তু, ভারতের গম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বৃদ্ধি শস্যের দাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
এ প্রেক্ষাপটে চালের বাজার স্থিতিশীল করা এবং সরকারের নিরাপত্তা মজুদ বাড়ানো অপরিহার্য। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিরও প্রয়োজন হতে পারে। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন পেয়েছে সরকার।
যদিও বিশ্বব্যাপী চালের বাজারে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে বেশি দাম রয়েছে, তবে বিদ্যমান চাল আমদানি শুল্ক ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করাকে মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে বন্যার পর উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। প্রতিক্রিয়ায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার নজরদারি বাড়িয়েছে। ন্যায্য বাজার মনিটরিং এবং অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকলেও খাদ্যশস্যের দাম বাড়তে থাকে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে, ভারত সম্প্রতি তার চাল রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। বাংলাদেশ তার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করলে ভারত থেকে চাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ সম্মিলিত শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এই শুল্ক হ্রাস আমদানিকারকদের উৎসাহিত করবে বলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।