ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রবিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৫ ৯ চৈত্র ১৪৩১
ই-পেপার রবিবার ● ২৩ মার্চ ২০২৫
Select Year: 
ব্রেকিং নিউজ:




সামনে চাপ আরও বাড়ার শংকা
ঋণের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশি দেনা পরিশোধে
এসএম শামসুজ্জোহা:
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৪২ পিএম  (ভিজিটর : ৪৮৩)
বাংলাদেশের ঋণের বোঝা বাড়ছে। এখন যেসব ঋণের অর্থছাড় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। 

চলতি অর্থবছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশে যত বিদেশি ঋণ এসেছে; আগে নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে তার তুলনায় বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তবে এখন প্রতিবছর যত অর্থ বিদেশি সহায়তা হিসেবে আসে, তার তিন ভাগের এক ভাগ আগের নেওয়া ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয়। অবশ্য বাজেটে ঋণ পরিশোধে আলাদা অর্থ বরাদ্দ থাকে। সামনে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ অনেকটাই বেড়েছে। তবে ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে জুলাই মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় তুলনামূলক কম হয়েছে। সাধারণত বিদেশি ঋণ হিসেবে পাওয়া অর্থের চেয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থ কম খরচ করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. দ্বীন ইসলাম বলেন, গত জুলাই ও আগস্ট দেশের ইতিহাসে অন্যতম ঘটনাবহুল মাস। পরিবর্তনের পাশাপাশি অনিশ্চয়তাও ছিল। সেসময় ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি ও বিতরণ কম হয়েছে এটাই স্বাভাবিক।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকে বাংলাদেশকে কয়েকশ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে; তার বাস্তবায়নে সহায়তা করতে মূলত অতিরিক্ত ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে জুলাই-আগস্ট সময়ে ছাড় করা হয়েছে কম অর্থ। বিপরীতে এ সময়ে বাংলাদেশকে নিয়মিতভাবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসে সব মিলিয়ে ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে এসেছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাকি সাত কোটি ১৩ লাখ ডলার পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। অন্যদিকে একই সময়ে ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ২৬ কোটি ডলার আসল এবং ১২ কোটি ডলারের বেশি সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ সরকারকে ২৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসের হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ পরিশোধ প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেড়েছে। মোট পরিশোধ করা হয়েছে চার হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। আগের বছর জুলাই মাসে দুই হাজার ৭৫২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল।

ইআরডি বলছে, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল বাংলাদেশ। আর গত ১০ বছরের মাথায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১ কোটি ডলারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ পৌনে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর বিদায়ি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩৩৬ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর মানে গত এক যুগে বিদেশি ঋণ পরিশোধ তিন গুণ হয়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে নতুন সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শুরু হবে ২০২৬ সালে। এটি আরো দুই বছর পিছিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ ইউয়ানে নেওয়ার বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে ঢাকা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বিদেশি ঋণপ্রাপ্তির চেয়ে পরিশোধ বেশি হওয়া অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। অতীতে বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য বাছবিচার ছাড়াই বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্পে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এর বিপরীতে অর্থনৈতিক সুবিধা (রিটার্ন) কবে পাওয়া যাবে; তা নিশ্চিত নয়। যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেলিম রায়হানের মতে, ঋণ করে বিদেশি ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আরও বেশি উদ্বেগের বিষয় হবে। ভবিষ্যতে ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট ৩০০-এর বেশি প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগের বিদেশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড এখনো শেষ হয়নি। ফলে আসল পরিশোধ করতে না হলেও এসব ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ নিয়ে প্রকল্প শেষ করা হয়েছে। এমন প্রায় ৭০০ প্রকল্পের ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার প্রকল্পের বিপরীতে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। ওই সব প্রকল্পের চুক্তির দিন অনুসারে সারা বছরের প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রকল্পের ঋণের অর্থসংশ্লিষ্ট বিদেশি সংস্থা ও দেশের কাছে পাঠাতে হয়। এই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতা ও পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে বিদেশি ঋণের অর্থ পাঠানো বন্ধ ছিল। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিদিনই ঋণের অর্থ পাঠানোর চিঠি ইস্যু করেছে। কিন্তু অর্থ বিদেশে পাঠানো যায়নি। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, সার এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির বিল পরিশোধ করতে হয় দৈনিক গড়ে আড়াই কোটি ডলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশি ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। আমরা কোনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হব না। তবে কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ব্যাপকভাবে বাড়চ্ছে।’







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]