প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:৫৬ পিএম (ভিজিটর : ৫০৯)

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন বোরহান শিকদার নামে একজন ছাত্র-অভিভাবক। গত ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহষ্পতিবার আকস্মিকভাবে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুবরণ করায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তার মৃত্যুর জন্য বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর জনাব কবির হোসেন শেখকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, মাহবুবুর রহমান একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীন বেশ কিছু বিষয়ে কবির হোসেন অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় প্রধান শিক্ষক তার প্রতিবাদ করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গোপালগঞ্জ সদর কে অবহিত করায় কবির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষককে অপমান অপদস্ত করেন। প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গত ২৩ তারিখ ঢাকা হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয় এবং তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর রাত নয়টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় এলাকায় অসন্তোষ ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শেখ হেমায়েত উদ্দিন এর নাম দেয়া হলেও তাকে শর্ত পালন করে প্রতিষ্ঠাতা করা হয় নি। তার দুই ছেলে আবু সাহিদ ওরফে আবু মিয়া এবং মুকুল শেখ কেও দাতা সদস্য করা হয়েছে! আবু সাহিদ নৈশপ্রহরী পদে কর্মরত ও মুকুল শেখ গ্রন্থাগারিক পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ নিয়েছেন কিন্তু তার কোন কাগজপত্র স্কুলের কাছে নেই। শেখ হেমায়েত উদ্দিন পরিবারের চারজন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন যা নিয়েও মানুষের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানে কিভাবে একই পরিবার থেকে চারজন চাকরি পেয়েছেন সে বিষয়ে বিস্মিত হয়ে অভিযোগকারী প্রতিবেদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন যে, তাদের চারজনের নিয়োগপ্রক্রিয়া ও কাগজপত্র সঠিকভাবে তদন্ত করে যাচাই করে দেখা হোক এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, একই পরিবার থেকে চারজন চাকরি পাওয়ার সুবাদে তারা নিজেদের মালিকপক্ষ হিসেবে জাহির করেন এবং বিদ্যালয়ের ছাত্র - শিক্ষকদের থোড়াই কেয়ার করেন ফলে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ওসমান মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ঐ পরিবারের কাছে স্কুলটি জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা ম্যানেজিং কমিটিকেও পাত্তা দেয় না। তবে শীঘ্রই বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা জোর চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের মৃত্যুর বিষয় টি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বোরহান শিকদারের দেয়া অভিযোগের কপিতে দেখা যায় যে, বিদ্যালয়ের আর্থিক, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভাপতি - রেজাউল হক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর / ক্লার্ক - কবির হোসেন, গ্রন্থাগারিক - মুকুল শেখ ও শুকুর মোল্লার যোগসাজশে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চাকরি দেয়ার কথা বলে তারা অনেকের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। চাকরি না দিয়ে প্রতারণা করেছে অন্তত ছয়জনের সাথে। সূত্র মতে ছয়জনের কাছ থেকে দশলক্ষাধিক অর্থ আত্মসাৎ করে তাদেরকে চাকরি না দিয়ে বরং বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রী ও -অভিভাবকগণ মানববন্ধন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে।