* ডিপিডিসিতে গড়েছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট
* দুদকে একাধিক অভিযোগ থাকলেও দিয়েছেন ধামাচাপা
ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আস্থাভাজন। পিজিসিবি’র প্রকল্প পরিচালক থাকাকালে নিয়োগ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ঠিকাদার। তিনি দায়িত্বে থাকা প্রকল্পের নির্মান ব্যয় বাড়িয়েছেন দফায় দফায়। প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করেছেন শত শত কোটি টাকা। এভাবেই নয় ছয় করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এমনটাই অভিযোগ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (ডিপিডিসি) বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) ও পিজিসিবি’র সাবেক প্রকল্প পরিচালক কিউএম শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে হাবিবুর রহমান নামক ব্যাক্তির লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র নির্দেশনায় কিউএম শফিকুল ইসলামকে ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) পদে দুই বছরের জন্য চলতি বছরের শুরুতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ঢাকায় বাড়ি, একাধিক ফ্লাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমান টাকা এবং নিজ গ্রামের বাড়ি নওগাঁতে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। ইতোমধ্যে তিনি ডিপিডিসিতে তৈরী করেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ডিপিডিসি’র ডিএসএস ও সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ, গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালা ভঙ্গ করে সংযোগ প্রদান, বদলী বানিজ্যসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তিনি তা ম্যানেজ করে ধামাচাপা নিয়ে দেন।
অপরদিকে দুদকে করা অপর এক অভিযোগে বলা হয়, বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশে একজন সিনিয়র সচিব তাকে ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি ডিপিডিসিতে বদলী, পদোন্নতি ও নিয়োগ বানিজ্য করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম সংস্থাটিতে যোগদানের পর থেকেই সাংবাদিক বিদ্বেষী আচরণ করছেন। এমনকি সংস্থার মধ্যে তিনি সাংবাদিক বিদ্বেষী বিষবাস্প ছড়াচ্ছেন। চলতি বছরে যোগদানকৃত এই নির্বাহী পরিচালক কতিপয় প্রকৌশলীদের সাথে এক জুম মিটিং-এ সাংবাদিকদের নিয়ে বিষোদগার করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের কাউকে কাউকে এমন কথাও ঐ নির্বাহী পরিচালক বলেছেন সাংবাদিকদের প্রশ্রয় দিবেন না, কোনো ঝামেলা হলে আমি দেখবো। এর অন্যতম কারণ সংস্থার কোনো অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য যাতে সংবাদ কর্মীরা না পায়। নির্বিঘ্নে সকল অনিয়ম দুর্নীতিকে যায়েজ করতেই নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এমন কৌশল অবলম্বন করছেন বলে সূত্রের দাবি।
অভিযোগ রয়েছে, ইতোমধ্যেই একাধিক সিনিয়র সংবাদকর্মী পেশার প্রয়োজনে নির্বাহী পরিচালকের (অপারেশন) দপ্তরে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য গেলে সংবাদকর্মী শুনলেই নানাভাবে হয়রানী করা হয়েছে। এরমধ্যে কেউ কেউ আদৌ তার সাক্ষাৎই পাননি, কেউবা আবার তার ব্যক্তিগত সহকারীর প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে তার সঙ্গে দেখা না করে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ প্রবেশ করতে পারলেও জরুরী কাজের ব্যস্ততার অজুহাতে দু’চারটি কথা বলেই বিদায় করে দিয়েছেন।
ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে, তা পুরোটাই বানোয়াট। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সাথে আমার মাত্র একবার দেখা হয়েছে। ফলে তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া পিজিসিবি প্রকল্প পরিচালকদের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এই প্রকল্পের সকল ঠিকাদার ভারতীয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ডিপিডিসিতে যোগদানের পূর্বেই ডিএসএস ও সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে, ফলে সেখানে আমার জড়িত থাকার কথা সত্য নয়। তিনি বলেন, আমি ডিপিডিসিতে যোগদান করলাম অল্পকিছুদিন, এরমধ্যে কিভাবে সিন্ডিকেট গড়ে তুললাম তা আমার বোধগম্য নয়। কখনোই সাংবাদিক বিদ্বেষী নয় বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসি’র একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম যদি সাংবাদিক বিদ্বেষী আচরণ বন্ধ না করেন তাহলে প্রকারন্তরে সংস্থার উন্নয়নে তিনি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। শুরু থেকেই তিনি সাংবাদিকদের সহ্য করতে পারছেন না বলে শুনেছি। এটা মোটেই হওয়া উচিত নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরিবর্তে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎস ও সূত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত হলে সে যতো বড়ো ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোক না কেন তার দুর্নীতির পুরো চিত্র উন্মোচন করা উচিত। কারণ আইন সবার জন্য সমান। দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলি, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর যথেষ্ট নয়। ক্ষেত্রবিশেষে তা দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয় এবং অজান্তেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।