সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা দরজায় কড়া নাড়ছে। আগামীকাল মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আর ৮ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে মূল পূজা। সেই হিসাবে বলা চলে দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে একেক দিন একেক পোশাকে দেবী দুর্গাকে বরণের আয়োজন আগে থেকেই শেষ করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাই শারদীয়ার আগমনীর আমেজে পুরোদমে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। উৎসবের কেনাকাটা করতে বাজারমুখী হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিবছর পূজা ঘিরে বাড়তি বেচাকেনায় চাঙা হয়ে ওঠে রাজধানীর মার্কেটগুলো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। পূজার মাত্র কয়েকদিন আগেও মার্কেটে ক্রেতা সংকট। ক্রেতা সমাগম না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন দোকানিরা। তারা বলছেন, এবারের পূজায় তাদের ব্যবসা ভালো না। অনেকে নতুন পুঁজি খাটিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছেন। অনেকে লগ্নি করেছেন। কিন্তু কাঙ্কিত ক্রেতার দেখা নেই। ব্যবসায়ীদের অনেকে লোকসানের আশঙ্কাও করছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, চাঁদনীচক মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট ও এর আশপাশের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে ক্রেতা নেই। দোকানিরা অলস সময় পার করছেন। কিছু দোকানে টুকটাক ক্রেতা দেখা মিললেও বিক্রেতারা বলছেন, বেচাবিক্রি একেবারেই কম। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এবার কাপড়সহ অন্যসব পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তারা সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন না। তাই অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম কেনাকাটা করে ফিরে যাচ্ছেন। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শাড়ি কর্নার নামের দোকানের ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন জানান, পূজার বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। টুকটাক কাস্টমার আসছে। কেউ কেনাকাটা করছে আবার কেউ ফিরে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবারের ব্যবসা খারাপ। দেখা যাক সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়ে কি না।
পূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতি বছর এ সময় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যমন্ডিত শাঁখারীবাজারের দোকানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরব হয়ে ওঠে। শাঁখা, শঙ্খ, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরদানি, ঠাকুরের মালা, কীর্তনের মালা, কদম মালা, জবের মালা, মুকুট থেকে শুরু করে শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ অলঙ্কারের দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটার ধুম। সেই সঙ্গে ঢাক, খোল, ঢোল, তাসার দোকানগুলোতেও ব্যস্ত থাকেন বাদ্যযন্ত্রের কারিগর ও বিক্রেতারা। এবার তাদেরও নেই সেই রমরমা। শাঁখারীবাজারের বাদ্যযন্ত্র বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নিউ বাদ্য ভান্ডারের কর্ণধার অমূল্য চন্দ্র দাস বলেন, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জমকালো আয়োজন কম এবার। তাই বিক্রিও কম। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলা যায় না। এ মৌসুমে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হয়। সেভাবেই বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা; তাতে এবার এক লাখ টাকা বিক্রি হবে কি না সন্দেহ।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার পোশাক ও জুতা বিক্রেতারা বলছেন, সামনে দূর্গা পূজা উপলক্ষ্যে পোশাকের দোকানে ক্রেতার আনাগোনা সামান্য হলেও বেড়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। তবে পুজার বাজার অনুযায়ী বিক্রি অনেক কম। তবে যে পরিমাণ বেচাকেনা হচ্ছে; সেটাকে ভালো বলা যাবে না, মন্দের ভালো। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণেও বিঘ্ন ঘটেছে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ অন্যদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। শোভন সরকার নামের এক ক্রেতা বলেন, কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ইচ্ছা ছিল শার্ট, প্যান্ট কিনবো। দাম বেশি হওয়ায় শুধু প্যান্ট কিনেই ফিরে যাচ্ছি। বাজেট কম, পরে এসে শার্ট কিনবো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দুুর্গাপূজার মৌসুমে আমরা ধারণা করি সব মিলিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। কিন্তু এবার এটা কতটুকু পূরণ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তবে এখনো পূজার বাজার সেভাবে শুরু হয়নি। আমরা আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে। কারণ এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠানেরও একটা বাজার রয়েছে।
এদিকে স্বর্ণালঙ্কারের বাজারে পূজার মৌসুমের প্রভাব পড়েনি বলে জানান জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় ছিল যখন পূজার মৌসুমে স্বর্ণালঙ্কারের বাজারেও ক্রেতার ভিড় বেড়ে যেত। বর্তমানে সোনার আকাশচুম্বি দামের কারণে খুব কম মানুষই স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে পা বাড়চ্ছেন। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নির্বাহী সদস্য এবং সিরাজ জুয়েলার্সের কর্ণধার দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় ধস নেমেছে। একটি ছোট্ট নাকফুলের দামই এখন ২ হাজার টাকা। আমরা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের হারিয়েছি অনেক আগেই। এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদেরও পাচ্ছি না। উচ্চবিত্ত ক্রেতারা এলেও হাতেগোনা কয়েকজন।