ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের(ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতে ঢাবির উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ খানকে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আওলাদ জিসান।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় সিলমোহর দিয়ে গ্রহণ করেছেন। এ স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে, এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত।
‘যার ফলে যে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যের কথা বলে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটা বিগত ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়ণে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়া-এসব সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে।
ফলস্বরূপ, সাত কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বারবার একে অপরের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দিয়ে এসব সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে রাজধানীর এ সাতটি কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
জিসান আরও বলেন, আমাদের কর্মসূচির ধারাবাহিকতার ফলস্বরূপ আজ ঢাবির ভিসি এবং ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট স্নারকলিপি দেওয়া হয়। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের মতো দুইজন আমাদের প্রতি ছিলেন ইতিবাচক। তাই আমরা আসা করি খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে আমাদের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে, গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে একই দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সংকট, সমস্যা এবং বৈষম্যের শিকার এ কলেজগুলো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি নিয়ে নীলক্ষেত মোড়েও অবস্থান করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এসব কলেজে অধ্যয়নরত কয়েক লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।