ই-পেপার বাংলা কনভার্টার মঙ্গলবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৪ ২২ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার মঙ্গলবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




আজ বিশ্ব হার্ট দিবস
দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা অপ্রতুল
বায়েজীদ মুন্সী :
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০৮ পিএম  (ভিজিটর : ২৭৩)
দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। এদের অধিকাংশই জন্মগতভাবে এ রোগে ভুগছে। অথচ প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এটি শনাক্ত কিংবা চিকিৎসার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে শেষ আশ্রয় স্থল হিসেবে রোগীর পরিবারকে ছুটতে হচ্ছে রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে। আর সেখানেও পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অবঠামো সুবিধা না থাকায় মিলছে না কাঙ্খিত সেবা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদরোগ চিকিৎসায় অগ্রগতি হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। আর এ ধরনের চিকিৎসার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণেও ঘাটতি রয়েছে।

হৃদযন্ত্রের ত্রুটি নিয়ে কত শিশুর জন্ম হচ্ছে, তার প্রকৃত পরিসংখ্যান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) কাছে নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ সংখ্যা প্রায় চার লাখ। এর সঙ্গে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার নতুন শিশু। সর্বশেষ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ২৫টি শিশু কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি) নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। অর্থাৎ দেশে নবজাতকের ২ দশমিক ৫ শতাংশ জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত।

অন্যদিকে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসিএসবি) এর তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে ১০-১২ জনই হৃৎপিণ্ডে ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। বাংলাদেশে এ সংখ্যা বেশি। এখানে হাজারে প্রায় ১৫টি শিশু জন্মগত হৃদরোগে ভুগছে। সে হিসেবে শিশু কার্ডিওলজিস্ট ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জন প্রয়োজন পাঁচ শতাধিক। দেশে শিশু হৃদরোগীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মারা যায় চিকিৎসার অভাবে। তবে দেশে শিশু হৃদরোগী ও বিনা চিকিৎসায় মৃতদের পরিসংখ্যান সেভাবে পাওয়া যায় না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল এই ৬টি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। পাশাপাশি শিশু হৃদরোগীর জন্য নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসকও। কার্ডিয়াক সোসাইটির তথ্যানুযায়ী, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও শল্যবিদসহ মোট ৩৮৩ জন চিকিৎসক নিবন্ধিত রয়েছেন। তবে সারা দেশে শিশু হৃদরোগ পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট আছেন মাত্র ৪১ জন। ছয় বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ২০। এ সময় শিশু কার্ডিওলজিস্টের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যায় তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এছাড়া যে কয়জন আছেন তাদের অধিকাংশের অবস্থানই রাজধানী কেন্দ্রীক। পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর জন্য দেশে পৃথক কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিসিএসবি) সভাপতি ও বিএসএমএমইউর শিশু কার্ডিওলজির অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসা অবহেলিত। এর মধ্যে শিশু কার্ডিয়াক মেডিসিনে কিছুটা অগ্রগতি হলেও সার্জারিতে তেমন অগ্রগতি নেই। ঢাকায় শুধু চার-পাঁচটি হাসপাতালে শিশুদের হৃদরোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা হয়। বেসরকারিতে শিশুদের কার্ডিয়াক সার্জারি মোটেও নেই। কারণ এতে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, সে অর্থের বিপরীতে মুনাফার সুযোগ ও সম্ভাবনা কম থাকায় বেসরকারি খাত এগিয়ে আসছে না। আমরা দেশে শিশু কার্ডিয়াক সার্জারিতে এমএস চালু করার চেষ্টা করছি। এমএস ও এফসিপিএস চালু করতে পারলে আশা করছি আগামী ১০ বছরের মধ্যে শিশু কার্ডিয়াক সার্জারিতে আমরা বেশ কয়েকজন দক্ষ সার্জন তৈরি করতে পারব। এছাড়া দেশের আট বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য চলমান প্রকল্পটিতে শিশু কার্ডিওলজির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীন বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় সার্বিকভাবে আমরা আগের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছি। কিন্তু শিশু হৃদরোগের ক্ষেত্রে যে পরিমান অগ্রগতি প্রয়োজন তার থেকে পিছিয়ে। কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর জন্য আমরা এখনও পর্যাপ্ত ফ্যাসিলিটি তৈরি করতে পারিনি। হাতেগোনা ৬টি হাসপাতাল ছাড়া শিশু হৃদরোগের বিভাগই নেই। তাছাড়া প্রশিক্ষিত জনবল ও চিকিৎসকের বেশ ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি। 

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। ২০০০ সাল থেকেই এদেশে দিবসটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এ বছর ‘ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়েছে।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]