ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২৪ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু
বায়েজীদ মুন্সী
প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫:৩০ পিএম  (ভিজিটর : ৫১৯)
চলতি বছরের শুরু থেকেই উল্লেখযোগ্য ছিল ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এরপর মে মাস থেকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শুধুমাত্র চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ দিনেই মারা গেছে ৩৯ জন। রাজধানীর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অন্যান্য জেলায়ও। হাসপাতালগুলোতে এখনই ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া ভিড়। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা তৈরির আশঙ্কার কথা কয়েক মাস আগ থেকে বলা হলেও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি ধারণ করেছে তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশে মৈত্রী হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ রাজধানীর সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হপসাতালে প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে অসংখ্য রোগী আসছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৫ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ১০৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০১ জন, ডিএসসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী কতরাচ্ছেন। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে সাধারণ ওয়ার্ডের বাইরেও আলাদা করে সিঁড়ির কাছে রোগীদের জন্য বেডের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও স্যালাইন, নেবুলাইজার সবকিছু বাইরে থেকে কিনে আনার অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৬৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৯ হাজার ৮২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৩৭ জন। আর বর্তমানে ২ হাজার ৭০৬ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৪৯৫ জনই রাজধানীর হাসপাতালে এবং বাকি এক হাজার ২১১ জন ঢাকার বাইরের। এছাড়া এবছর ডেঙ্গুতে ৮৫ জন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৭ জন মিলিয়ে মোট ১২২ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে ৫ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ১২ জন, জুন মাসে ৮ জন, জুলাইতে ১২ জন, আগস্টে ২৭ জন এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও প্রস্তুত থাকতে হবে অধিক ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনার। জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অক্টোবরে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে হাজারো মানুষ। তিনি বলেন, কোনো এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিটি বাড়ির চতুর্দিকে ফগিং করে উড়ন্ত মশা মারাকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনোভাবেই ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাটি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলোর চতুর্দিকে নিয়মিত ফগিং করতে হবে যাতে সেখানে কোনো এডিস মশা বেঁচে না থাকে। হাসপাতাল এবং বাড়িতে থাকা যেকোনো ডেঙ্গু রোগী সব সময় মশারির নিচে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, অক্টোবর এবং নভেম্বরে হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি মশার প্রজনন স্থল ধ্বংসের কার্যক্রমও চালাতে হবে। এ কাজে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় এখনো ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করেনি সেসব এলাকায় লার্ভা মারার কীটনাশক ব্যবহারে জোর দিতে হবে। জনগণের অভাব থাকলে এখন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণ সাথে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জরুরি সার্ভিস হিসেবে কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। যেহেতু নির্বাচিত কাউন্সিলররা অনুপস্থিত তাই মশক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উচিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কাজটিকে সঠিকভাবে তত্ত্বাবধায়ন ও মনিটর করা।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন নিয়মিত মশা নিধনে কাজ করছে। এই সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তাই একযোগে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে বিশেষ মশক নিধন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ এই কর্মসূচিতে ডিএনসিসির দৈনন্দিন মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও ডিএনসিসির জনসচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে মাঠে আছে বিএনসিসি, স্কাউট এবং গার্লস গাইডের সদস্যরা। সবার সম্পৃক্ততায় বিশেষ এই কার্যক্রম ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দিয়েছে। শুরুতে তারা সবাইকে সচেতন ও সতর্ক করবে। কিন্তু তারপরও যদি অবহেলার কারণে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম তদারকি করতো। বর্তমানে অনেক কাউন্সিলররা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও এই কার্যক্রম তদারকি যেন ব্যহত না হয় সেজন্য ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি টিম করে দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা সব ওয়ার্ডের এই কার্যক্রম তদারকি করছে।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]