ই-পেপার বাংলা কনভার্টার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২৪ আশ্বিন ১৪৩১
ই-পেপার বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০২৪
Select Year: 
শিরোনাম:




মন্তব্য প্রতিবেদন
পুলিশ সংস্কার : কাজ অনেক সময় কম
কাজী আব্দুল হান্নান
প্রকাশ: বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:১২ এএম আপডেট: ১৮.০৯.২০২৪ ৩:৫৫ পিএম  (ভিজিটর : ৩৮৩)
আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুলিশে আমূল পরিবর্তন আসছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে বাহিনীটিকে রাজনীতির প্রভাব থেকে বের করে আনাই এ উদ্যোগের প্রাথমিক লক্ষ্য। সাথে জনমনে পুলিশের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনা। 
সংশ্লিষ্টতা আছে এমন সব আইনের কোথায় কি সংশোধন করে লক্ষ্য অর্জন করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। দায়িত্বে বড় ধরনের রদবদলের কাজ ইতিমধ্যেই প্রায় গুছিয়ে আনা হয়েছে। দ্রুতই পুলিশের মনোগ্রাম থেকে ‘নৌকা প্রতীক’ অপসারণ ও পোশাকে পরিবর্তন আনা হবে বলেও ধারণা পাওয়া গেছে। তবে ফৌজদারী কার্যবিধি (সিআ্রপিসি) এবং পুলিশ রেগুলেশন (পিআরবি) সংশোধনের মত বড় কাজও সামনে করতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট থেকে প্রায় আড়াই দিন বাংলাদেশে কোনো সরকার ছিল না। দেশ প্রায় পক্ষকাল ছিল পুলিশ বিহীন। এ সময়ে বাস্তবিকই সারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু ছিল না। লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ডাকাতি এমনকি জেলভেঙ্গে কয়েদি বেরিয়ে যাওয়ার মত নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। ধর্ম ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে পতিত সরকারের রাজনৈতিক অনুসারি, সমর্থক ট্যাগ লাগিয়ে মানুষের বাড়িঘর এবং উপাসনালয়ে আক্রমণ হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার যে নৃশংসতা দেখিয়েছে, তার চেইন রিঅ্যাকশন হিসাবে থানা আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে এসময়। দেশজুড়ে এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে এসব জীবনহানি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশ দৃশ্যত সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেয়। অধস্তন কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে পুলিশ সদস্যরা। ঢাকাসহ দেশের চার শতাধিক থানা ও পুলিশ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের পর ৬ আগস্ট থেকে পুলিশের নন-ক্যাডারভুক্ত সদস্যরা কাজে যোগদান থেকে বিরত থেকেছেন। 
শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধাচরণ ছেড়ে পুলিশকে প্রতিপক্ষ মনে করতে শুরু করে। এরই জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশ লাইন ও কারাগার থেকে সে সময় যেসব অস্ত্র লুট হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার করা যায়নি লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফ যে ধরনের বিশেষায়িত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ও অন্যান্য যোগাযোগ সরঞ্জাম ব্যবহার করে, তার একটা অংশ গণভবন থেকে লুট হয়ে গেছে। এসব কারণে নাগরিক জীবন এখনো নিরাপদ হয়নি। 
দমনপীড়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা এদেশে নতুন নয়। একসময়ে কোহিনুর, আশরাফ, মালেকুল মউত খ্যাত এসি মালেককে যেমন দেখেছে মানুষ; ক্ষমতার হাতবদলে পুলিশ বাহিনীতে বিপ্লব, হারুন, কাফিদের তান্ডবের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। নির্বচনের ফল পক্ষে নেয়া এবং রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য পুলিশ, এমনকি সশস্ত্র বাহিনীসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণের কারণে মানুষ তাই বিক্ষুদ্ধ।
এ কথা ঠিক, শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করা কিছু ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মাত্রাছাড়া ভাবে সরকারের তাঁবেদারি করার কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই বাহিনী। এসব পুলিশ কর্মকর্তা সমাজে মুখচেনা। শোনা যায়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তারা এতই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, পুলিশের নীতিনির্ধারণী সিনিয়র কর্মকর্তারাও তাদের কাছে অসহায় ছিলেন। পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, এসব কর্মকর্তাই সরকারকে বাঁচাতে আন্দোলনকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চালানোর হুকুম দেয়।
পুলিশের অধস্তন কর্মচারী সংগঠন ‘পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করার জন্য ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, কিছু পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত লোভ, দলকানা কর্মকাণ্ড ও ইউনিফর্ম গায়ে জড়িয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর কারণে মানুষের ক্ষোভ সঞ্চিত হয়েছে। সেই প্রবল ক্ষোভের শিকার নিরপরাধ ও সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। তাদের ভাষায়, আন্দোলনরত মানুষকে সরাসরি গুলি করতে না চাইলেও সরকারদলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য উর্দ্ধতনদের নির্দেশ অনুযায়ী সেটি করতে তারা বাধ্য হয় । 
এর আগে নবনিযুক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকও আন্দোলনের বিক্ষোভকে ঘিরে পুলিশের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি যোগদানের পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দেশের থানাগুলোতে সীমিত আকারে পুলিশের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। যদিও এরপর থেকে ধীরে ধীরে সহিংসতা অনেকটা কমে আসে। কিন্তু তা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই মানুষের মনে সৃষ্ট ভয় দূর করে জীবন যাপনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবী। 
এতসবের পরও এই সামান্য সময়েই উপলব্ধি করা গেছে- পুলিশের সক্রিয় উপস্থিতি কতটা অপরিহার্য। পুলিশ ছাড়া কোনো রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই পেশাগত দক্ষ, জনগণের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন এবং সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত পুলিশ গড়ে তোলা জরুরী। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, জনগণের অধিকার সংরক্ষণ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সততার সঙ্গে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুলিশের ভেতর বর্তমানে যে প্রচলিত অনুশীলন চালু আছে, তার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের আইন, আদালত ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করে পুনর্গঠনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুরাতনদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগ করে রাতারাতি পরিবর্তনও সম্ভব নয়। দক্ষতা অর্জনের জন্য নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের সময় দিতে হবে। তাই পুলিশের ভেতরের দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করে তা সংশোধন এবং আইন পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করার পথেই হাটতে হবে। 
আবার শুধু আইন পরিবর্তন করলেই চলবে না। পুলিশের অভ্যন্তরীণ পরিচালনার ক্ষেত্রে সব পর্যায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ইউএনডিপির সহায়তায় বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্য ‘খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭’ শিরোনামে একটি প্রস্তাবনা পুলিশের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন যা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। 
পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের অনেকে কাজে যোগ না দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের জনবলের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এই শূন্যতাটা যত শিগগিরই সম্ভব পূরণ করতে হবে। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও জনবান্ধব করার উপযোগী প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রতি আচরণে মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটানোর জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রতিনিয়ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। 
আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, জাতীয় সম্পদের সুরক্ষা দেয়া, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারীদের নিরাপত্তা ও প্রটোকল দেয়ার দায় পুলিশের বরাবরের। পাশাপাশি প্রতিহিংসা ও নিবর্তনের জন্য দায়ের হওয়া মামলার সুষ্টু তদন্তে নিরপেক্ষ এবং যথাযথ ভূমিকা রাখার পরীক্ষাও এখন পুলিশ বাহিনীর সামনে। এই পরীক্ষায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা প্রমান করতে পারার ওপরই নির্ভর করছে জনমনে পুলিশের প্রতি আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা।







সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বার্তা বিভাগ : ৯৫৬৩৭৮৮, পিএবিএক্স-৯৫৫৩৬৮০, ৭১১৫৬৫৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন ঃ ৯৫৬৩১৫৭, ০১৭১২-৮৮৪৭৬৫
ই-মেইল : [email protected], [email protected]