ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার রফিকুল হত্যা মামলায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা এ আদেশ দেন। এদিন সকালে শিক্ষার্থী ইমরান হাসানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আরেক মামলায় নূরুল ইসলাম সুজনকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
তবে এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন থাকায় পরে রিমান্ড স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী থানার রফিকুল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তারপর তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আদালত ইমরান হত্যা মামলায় দেয়া রিমান্ডের আদেশ স্থগিত করে রফিকুল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখান।
একইসাথে রিমান্ড শুনানির জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম সুজনের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রানা বলেন, ইমরান হত্যা মামলায় হাইকোর্টে তার জামিন শুনানি শেষ হয়েছে। আগামীকাল জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
গতকাল সকালে ইমরান হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর শাহ আলম মিয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। নূরুল ইসলাম সুজনের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
গতকাল রিমান্ড শুনানিকালে নূরুল ইসলাম সুজন আদালতকে বলেন, এ মামলায় নাম উল্লেখ ছাড়া আসামিদের কার কী ভূমিকা কিছু উল্লেখ করেনি। দেখবেন বাদী কাউকে চিনে না। বলতেও পারবে না আসামি কারা। আইনজীবীরাই আসামিদের নাম লিখে দিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। অনেকটা জোর করে রিলিজ দিয়ে নিয়ে আসছে। চিকিৎসার সুযোগ করে দেবেন। বিচার যা হওয়ার হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। নূরুল ইসলামের পক্ষে ফজলুল হক বাবু রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে বলেন, তিনি আমার আপন মামা। একজন আইনজীবীও। রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ। রাজনীতি করেছেন মানুষের সেবার জন্য, দুর্নীতির জন্য না। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৮৩৩ নম্বর রুম থেকে সুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থানার ইমরান হত্যা মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে গত ৫ আগস্ট সকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে। এতে ইমরান হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর নিহতের মা কোহিনুর আক্তার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
এদিকে ছয় বছর আগে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের জন্য তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে, তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর রমনা থানার সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারকালে মির্জা আব্বাসের ওপর রাশেদ খান মেননের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা লাঠিসোঁটা, রড, দেশীয় অস্ত্র এবং ককটেল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। আসামিরা মির্জা আব্বাসকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড দিয়ে আঘাত করেন। অন্যান্য নেতাকর্মীরা মির্জা আব্বাসকে জড়িয়ে ধরে রাখলে তার পিঠে আঘাত লাগে। এসময় কয়েকজনের হাতের হাড় ভেঙে যায় এবং হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন শেষে অসুস্থ অবস্থায় বাসায় ফেরত আসে।
গত ২২ আগস্ট গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এর পরদিন নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁর প্রথম দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭ আগস্ট মেননের ছয় দিনের রিমান্ড হয়। সর্বমোট ১১ দিনের রিমান্ডে ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি। আওয়ামী লীগ আমলে রাশেদ খান মেনন প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ মেয়াদের সরকারে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনায় স¤প্রতি কয়েকটি মামলায় রাশেদ খান মেননকে আসামি করা হয়েছে।